📌CHHANDA, CITRAKALPA EBONG BHARATIYA SAHITYA TATTWA 🌸 (Bengali Major)
🚨অবশ্যই সবাইকে শোয়ার করে। যাদের দরকার।
💡Suggestion & Question Paper or Answer ✍️সবকিছু এখানে পোয়ে জাবে।
(বাংলা ছন্দ)
Ans: শ্বাসঘাত প্রধান ছন্দ, যা দলবৃত্ত বা স্বরবৃত্ত ছন্দ নামেও পরিচিত, বাংলা ছন্দের একটি অন্যতম প্রধান রীতি। এই ছন্দে শ্বাসাঘাত (শব্দের উপর জোর) পর্বের প্রথমে থাকা অক্ষরটির উপর পড়ে এবং প্রত্যেক পর্ব সাধারণত চার মাত্রার হয়ে থাকে। একে "দলবৃত্ত" বলা হয় কারণ এখানে প্রতিটি অক্ষর একটি "দল" হিসেবে ধরা হয় এবং "স্বরবৃত্ত" বলা হয় কারণ এখানে স্বরধ্বনির প্রাধান্য থাকে।
গঠন:
স্বরবৃত্ত ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য হলো পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত ( nhấn) পড়ে।
প্রতিটি পর্ব সাধারণত চার মাত্রার হয়ে থাকে।
যুক্তাক্ষর থাকলে, তা ভেঙে দুটি অক্ষর হিসেবে ধরা হয় এবং প্রত্যেকটির জন্য এক মাত্রা করে ধরা হয়।
এই ছন্দে দ্রুত লয় বা গতি থাকে।
বৈশিষ্ট্য:
স্বরবৃত্ত ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শ্বাসাঘাতের অবস্থান।
এটি একটি সহজ ও সাবলীল ছন্দ, যা সাধারণত ছড়া, গান, এবং লোকসাহিত্যে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এটি দ্রুত লয়ের কারণে আবৃত্তির জন্য উপযুক্ত।
উদাহরণ:
"আমার পণ
তোর মন
ভালো না
থাক না"
এই উদাহরণে, প্রতিটি লাইনের প্রতিটি পর্ব (যেমন "আমার", "পণ", "তোর", "মন") চার মাত্রার এবং প্রথম অক্ষর "আ", "ত" ইত্যাদি-র উপর শ্বাসাঘাত পড়ছে।
অন্য একটি উদাহরণ:
"খোকা যা''
"পাখি যা"
"ঘুঘু যা"
"পালা যা"
এখানেও প্রতিটি পর্ব চার মাত্রার এবং প্রথম অক্ষর (খো, পা, ঘু, পা) উচ্চারণে জোর দেওয়া হচ্ছে।
তান প্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলতে কী বোঝো? এর প্রকৃত ও উদাহরণসহ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Ans: তানপ্রধান বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দ হলো বাংলা কবিতার একটি প্রধান ছন্দ, যা পয়ার জাতীয় ছন্দ হিসেবেও পরিচিত। এই ছন্দে মূল পর্ব আট বা দশ মাত্রার হয়ে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট তান বা সুর বজায় থাকে। মুক্তাক্ষর এক মাত্রা এবং রুদ্ধাক্ষর (শব্দের শেষে থাকলে) দুই মাত্রা ধরা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
তান:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একটি একটানা তান বা সুর যা পুরো কবিতাজুড়ে বজায় থাকে।
মাত্রা বিন্যাস:
মুক্তাক্ষর (যে অক্ষরটি স্বর দিয়ে শেষ হয়) এক মাত্রা এবং রুদ্ধাক্ষর (যে অক্ষরটি ব্যঞ্জন দিয়ে শেষ হয়) দুই মাত্রা হিসেবে ধরা হয়, তবে শব্দের শেষে রুদ্ধাক্ষর দুই মাত্রা হিসেবে গণ্য হয়।
পর্বের দৈর্ঘ্য:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মূল পর্ব সাধারণত আট বা দশ মাত্রার হয়ে থাকে। এটি ৮+৮, ৮+৬, ৮+৪, ৮+২ ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে।
লয়:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের লয় ধীর এবং গম্ভীর প্রকৃতির হয়।
উদাহরণ:
"সোনার খাঁচা ভেঙে | আজিকে উড়েছে পাখি,
মনের মাঝে তার | ব্যথা নাহি আঁকি।"
এই উদাহরণে, "সোনার খাঁচা ভেঙে" এই অংশে আট মাত্রা এবং "আজিকে উড়েছে পাখি" এই অংশে আট মাত্রা রয়েছে। "মনের মাঝে তার" অংশে আট মাত্রা এবং "ব্যথা নাহি আঁকি" অংশে আট মাত্রা রয়েছে। এখানে মুক্তাক্ষর "সো" "না" "খা" "চা" "ভে" "ঙে", "আ" "জি" "কে" "উ" "রে" "ছে" "পা" "খি", "মা" "ঝে" "তা" "র" "যা" "হি" "আ" "কি" ইত্যাদি এক মাত্রা করে এবং রুদ্ধাক্ষর "ভা" "ঙ" "খ" "উ" "ড়ি" "ছে" "পা" "খি" "মা" "ঝে" "তা" "র" "ব্য" "থা" "না" "হি" "আ" "কি" ইত্যাদি দুই মাত্রা করে ধরা হয়েছে।
এইভাবে, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বাংলা কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ যা এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তান, পর্বের দৈর্ঘ্য এবং লয়ের কারণে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়।
মাত্রাবৃত্ত বা ধনী-প্রধান ছন্দ মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কি। এর অন্যান্য নাম ও গঠন ভিত্তিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে উদাহরণসহ।
Ans: হ্যাঁ, মাত্রাবৃত্ত বা ধ্বনি-প্রধান ছন্দ বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ। একে কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দও বলা হয়। এই ছন্দে প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় লাগে, তাকে "মাত্রা" ধরা হয় এবং সেই মাত্রার উপর ভিত্তি করে ছন্দের গঠন করা হয়।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
মাত্রা গণনা:
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মাত্রা গণনা। এখানে অক্ষরবৃত্ত বা স্বরবৃত্তের মতো অক্ষর সংখ্যা বা শ্বাসাঘাতের উপর নির্ভর করে না, বরং প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় লাগে (মাত্রা) তার উপর ভিত্তি করে ছন্দ গঠিত হয়।
বিলম্বিত লয়:
এই ছন্দের লয় সাধারণত অক্ষরবৃত্ত বা স্বরবৃত্তের চেয়ে ধীর বা বিলম্বিত হয়।
পূর্ণপর্ব:
মূলপর্ব সাধারণত ৪, ৫, ৬ বা ৭ মাত্রার হয়ে থাকে।
রুদ্ধাক্ষর:
রুদ্ধাক্ষর (যে অক্ষর ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে শেষ হয়) এখানে সর্বদা দুই মাত্রা ধরা হয়।
অন্যান্য নাম:
একে কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দও বলা হয়।
উদাহরণ:
"ওরে নবীন, তোরা
কেড়ে নে রে, কেড়ে নে
পুরাতনের জীর্ণ বেশ"
এই উদাহরণে, "ওরে" - ২ মাত্রা, "নবীন" - ২ মাত্রা, "তোরা" - ২ মাত্রা, "কেড়ে" - ২ মাত্রা, "নে রে" - ২ মাত্রা, "কেড়ে" - ২ মাত্রা, "নে" - ২ মাত্রা, "পুরা" - ২ মাত্রা, "তনের" - ২ মাত্রা, "জীর্ণ" - ২ মাত্রা, "বেশ" - ১ মাত্রা। এখানে, পর্বগুলো ৪ বা ৫ মাত্রার হতে পারে।
উপসংহার:
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বাংলা কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দ যা অক্ষরবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত থেকে আলাদা। এর বৈশিষ্ট্য হলো মাত্রা গণনা এবং বিলম্বিত লয়। এই ছন্দে কবিতার গঠন ও মাধুর্য বৃদ্ধি পায়।
মহাপয়ার ও ও প্রবহমান পয়ার কিভাবে পৃথক। দুটি উদাহরণসহ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Ans: মহাপয়ার ও প্রবহমান পয়ার দুটি ভিন্ন ধরনের পয়ার ছন্দ। মহাপয়ার হল ১৪ মাত্রার পয়ার, যেখানে পর্ব থাকে দুটি (৮+৬) এবং প্রতি পর্বের মাত্রা সংখ্যা যথাক্রমে ৮ ও ৬। অন্যদিকে, প্রবহমান পয়ার ১৪ বা ১৬ মাত্রার হতে পারে, এবং এর পর্বগুলো সাধারণত (৮+৬) বা (৮+৮) মাত্রার হয়ে থাকে। এছাড়াও, মহাপয়ার সাধারণত অন্ত্যমিল যুক্ত হয়, যেখানে প্রবহমান পয়ার অন্ত্যমিলবিহীন হতে পারে।
মহাপয়ার:
মহাপয়ার হলো ১৪ মাত্রার পয়ার ছন্দ।
এর দুটি পর্ব থাকে: প্রথম পর্বে ৮ মাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৬ মাত্রা।
সাধারণত অন্ত্যমিল বা চরণ মিল থাকে।
উদাহরণ:
"উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী, উঠ অভাগীর দুলাল।
আলো করে এসো, ঘুচাও আঁধার, ঘুচাও সকল জাল।।"
প্রবহমান পয়ার:
১৪ বা ১৬ মাত্রার পয়ার ছন্দ হতে পারে।
পর্বের বিন্যাস (৮+৬) বা (৮+৮) হতে পারে।
অন্ত্যমিল নাও থাকতে পারে, অর্থাৎ চরণগুলি মিলযুক্ত নাও হতে পারে।
উদাহরণ:
"এসেছিলে বন্ধু তুমি, এ মোর কুটিরে,
কত কথা ছিল মনে, কত ছিলire।।" (১৪ মাত্রা) "জীবন নদীর স্রোত বয়ে যায় অবিরাম.
সুখ-দুঃখের ভেলায় ভেসে, জীবনের জয়গান।" (১৬ মাত্রা)
বৈশিষ্ট্য:
পর্ব ও মাত্রা:
মহাপয়ারে পর্ব দুটি (৮+৬) এবং প্রবহমান পয়ারের পর্ব বিন্যাস (৮+৬) বা (৮+৮) হতে পারে।
অন্ত্যমিল:
মহাপয়ারে সাধারণত অন্ত্যমিল থাকে, যা পদ্যটিকে শ্রুতিমধুর করে তোলে। প্রবহমান পয়ার অন্ত্যমিলবিহীন হতে পারে, যা একে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দেয়।
গতি:
মহাপয়ারের গতি কিছুটা ধীর এবং স্থির, যেখানে প্রবহমান পয়ারের গতি দ্রুত এবং প্রবাহমান হতে পারে।
ব্যবহার:
মহাপয়ার ক্লাসিক বাংলা সাহিত্যে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে প্রবহমান পয়ার আধুনিক বাংলা কবিতায় বেশি দেখা যায়।
এইভাবে, মহাপয়ার ও প্রবহমান পয়ার তাদের গঠন, পর্ব বিন্যাস, এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে পৃথক।
পয়ার ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও পয়ারের শোষণশক্তি সম্পর্কে লেখ।
Ans: পয়ার ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ১৪টি অক্ষর (৮+৬ মাত্রার দুইটি পর্ব) বিশিষ্ট চরণ এবং চরণগুলির মধ্যে অন্ত্যমিল থাকা। পয়ারের শোষণশক্তি বলতে বোঝায়, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য যা পয়ার ছন্দেও দেখা যায়, এবং এর মাধ্যমে ছন্দটিকে প্রয়োজনে কিছুটা প্রসারিত বা সংকুচিত করা যায়, যা পয়ারের লয় ও সুরের উপর প্রভাব ফেলে।
পয়ার ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
১. গঠন: পয়ার ছন্দে সাধারণত ১৪টি অক্ষর থাকে, যা দুইটি পর্বে বিন্যস্ত থাকে, যথা- ৮ ও ৬ মাত্রা।
২. অন্ত্যমিল: পয়ার ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দুইটি চরণের মধ্যে অন্ত্যমিল থাকা। অর্থাৎ, দুইটি চরণের শেষের শব্দগুলি মিলযুক্ত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে, প্রথম ও তৃতীয় এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের মধ্যেও অন্ত্যমিল দেখা যায়।
৩. দ্বিপদী: পয়ার ছন্দ সাধারণত দ্বিপদী (দুই চরণের একটি জোড়) হয়ে থাকে।
৪. স্থিতিস্থাপকতা: পয়ার ছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর স্থিতিস্থাপকতা, যা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য। একেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "পয়ারের শোষণশক্তি" হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পয়ারের শোষণশক্তি:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর স্থিতিস্থাপকতা। একেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "পয়ারের শোষণশক্তি" বলেছেন। এর মাধ্যমে পয়ার ছন্দের চরণগুলিকে প্রয়োজনের নিরিখে কিছুটা প্রসারিত বা সংকুচিত করা যায়, যা ছন্দের লয় ও সুরের উপর প্রভাব ফেলে। এই স্থিতিস্থাপকতা পয়ার ছন্দের একটি বিশেষ গুণ, যা একে অন্যান্য ছন্দ থেকে পৃথক করে। পয়ার ছন্দে ব্যবহৃত এই স্থিতিস্থাপকতা বা শোষণশক্তির কারণে একই ছন্দের কাঠামো বজায় রেখেও সুর ও লয়ের ভিন্নতা আনা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, মহাভারতের কথা/ অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে,/ শুনে পুণ্যবান। এখানে প্রতিটি চরণে ৮+৬ = ১৪টি মাত্রা বিদ্যমান, এবং চরণগুলির মধ্যে অন্ত্যমিলও রয়েছে। এই十四 অক্ষর বিশিষ্ট চরণগুলি পয়ার ছন্দের বৈশিষ্ট্য।
লয়।দল। মাত্রা।উপাদান গুলোর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ।
Ans: দল (Syllable):
সংজ্ঞা: দল হল একটি শব্দ বা শব্দের অংশ যা একবার উচ্চারিত হয়। এটি স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে।
বৈশিষ্ট্য:
স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতি দলে ১টি করে অক্ষর থাকে।
মাত্রা বৃত্ত ছন্দে মুক্ত দল ১ মাত্রা এবং রুদ্ধ দল ২ মাত্রা ধরা হয়।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মুক্ত দল ১ মাত্রা এবং রুদ্ধ দল ১ বা ২ মাত্রা হতে পারে।
উদাহরণ: "মা" একটি দল, "ভাত" একটি দল, "খেয়ে" একটি দল।
মাত্রা (Mora):
সংজ্ঞা: মাত্রা হল ছন্দের সময় গণনার একক। এটি একটি শব্দের উচ্চারণকাল নির্দেশ করে।
বৈশিষ্ট্য:
মুক্ত দল (যেখানে স্বরবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ নেই) ১ মাত্রা ধরা হয়।
রুদ্ধ দল (যেখানে স্বরবর্ণের পর ব্যঞ্জনবর্ণ আছে) ১ বা ২ মাত্রা ধরা হয়।
যেমন: "মা" (১ মাত্রা), "ভাত" (২ মাত্রা), "খেয়ে" (২ মাত্রা)।
উদাহরণ: "জল" (১+১=২ মাত্রা), "আকাশ" (১+২=৩ মাত্রা)।
লয় (Rhythm):
সংজ্ঞা: লয় হল ছন্দের গতি বা বেগ। এটি শব্দের পুনরাবৃত্তি এবং বিরতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
বৈশিষ্ট্য:
লয় দ্রুত, মধ্যম বা ধীর হতে পারে।
স্বরবৃত্ত ছন্দে দ্রুত লয় দেখা যায়।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দে মধ্যম লয় দেখা যায়।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে ধীর লয় দেখা যায়।
উদাহরণ: দ্রুত লয়ে আবৃত্তি করা গান, ধীর লয়ে আবৃত্তি করা কবিতা।
সনেট কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ আলোচনা করে
Ans: সনেট হলো ১৪ লাইনের কবিতা, যা একটি বিশেষ ছন্দে রচিত হয়। এর প্রথম আট লাইনকে অষ্টক এবং শেষ ছয় লাইনকে ষটক বলা হয়। সনেটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো একটি নির্দিষ্ট ভাব বা ধারণাকে কেন্দ্র করে আবেগ ও যুক্তির একটি মিশ্রণ ঘটানো।
সনেটের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য:
সংজ্ঞা:
সনেট (Sonnet) ইতালীয় শব্দ "সনেটো" থেকে এসেছে, যার অর্থ "ছোট গান"। এটি ১৪ লাইনের একটি বিশেষ ধরনের কবিতা, যা সাধারণত ইতালীয় বা ইংরেজি ছন্দে লেখা হয়।
গঠন:
সনেট সাধারণত দুটি অংশে বিভক্ত - অষ্টক (প্রথম আট লাইন) এবং ষটক (পরের ছয় লাইন)।
ছন্দ:
সনেট সাধারণত অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত হয়, যেখানে ১৪টি চরণ থাকে এবং প্রতিটি চরণে ১৪টি অক্ষর বা মাত্রা থাকে।
মিলবিন্যাস:
সনেটে মিলের একটি বিশেষ আদর্শ অনুসরণ করা হয়। ইতালীয় সনেটের (পেট্রার্কান সনেট) মিলবিন্যাস সাধারণত abba abba cdc dcd অথবা abba abba cde cde হয়। ইংরেজি সনেটের (শেক্সপীরীয় সনেট) মিলবিন্যাস abab cdcd efef gg হয়।
ভাবের বিন্যাস:
অষ্টকে সাধারণত একটি ভাবের উপস্থাপন করা হয় এবং ষটকে সেই ভাবের বিস্তার অথবা বিশ্লেষণ করা হয়।
ভাষা:
সনেটের ভাষা সাধারণত সংযত, গভীর এবং স্পষ্ট হয়।
উদ্দেশ্য:
সনেটের প্রধান উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ভাবকে কেন্দ্র করে পাঠকের মনে গভীর অনুভূতির সৃষ্টি করা।
উদাহরণ:
বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথম সনেট রচনা করেন। তার "কপোতাক্ষ নদ" সনেটটি একটি বিখ্যাত উদাহরণ। এই সনেটের প্রথম আট লাইনে (অষ্টকে) তিনি কপোতাক্ষ নদের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন এবং শেষ ছয় লাইনে (ষটকে) তিনি নদের কাছে তার নিজের জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ করেছেন।
অন্য একটি উদাহরণ হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "সোনার তরী" কবিতাটি। যদিও এটি পুরোপুরি সনেট নয়, তথাপি এর মধ্যে সনেটের কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
সনেটের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে: ১৪ লাইনের কবিতা, অষ্টক ও ষটকে বিভক্ত, নির্দিষ্ট ছন্দ ও মিলবিন্যাস, একটি ভাবের গভীর প্রকাশ, সংহত ও মিতবাক রচনা.
সনেট একটি বিশেষ ধরনের কবিতা, যা এর গঠন, ছন্দ, এবং ভাবের গভীরতার জন্য বিখ্যাত।
(চিত্রকল্প)
চিত্রকল্প কাকে বলে। উদাহরণসহ এর শ্রেণীবিভাগ ও গঠন বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
Ans: চিত্রকল্প (Imagery) হলো সাহিত্যের এমন একটি কৌশল, যা পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের (দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ ও স্পর্শ) মাধ্যমে পাঠকের মনে ছবি বা অনুভূতি তৈরি করে। এটি মূলত বর্ণনামূলক লেখার মাধ্যমে পাঠকের অভিজ্ঞতাগুলিকে আরও জীবন্ত এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
চিত্রকল্পের শ্রেণীবিভাগ:
চিত্রকল্পকে সাধারণত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
1. দর্শনেন্দ্রিয় বিষয়ক চিত্রকল্প:
এটি দৃশ্য বা ছবি সম্পর্কিত। যেমন, "সূর্যাস্তের রক্তিম আভা" বা "শিশির ভেজা সবুজ ঘাস"।
2. শ্রবণেন্দ্রিয় বিষয়ক চিত্রকল্প:
এটি শব্দ বা আওয়াজ সম্পর্কিত। যেমন, "বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ" বা "শিশুদের কলরব"।
3. ঘ্রাণেন্দ্রিয় বিষয়ক চিত্রকল্প:
এটি গন্ধ বা সুগন্ধ সম্পর্কিত। যেমন, "গন্ধভরা ফুলের সুবাস" বা "বৃষ্টির পর মাটির সোঁদা গন্ধ"।
4. স্বাদেন্দ্রিয় বিষয়ক চিত্রকল্প:
এটি স্বাদ সম্পর্কিত। যেমন, "মিষ্টি ফলের স্বাদ" বা "তিক্ত ওষুধের স্বাদ"।
5. স্পর্শেন্দ্রিয় বিষয়ক চিত্রকল্প:
এটি ত্বক বা স্পর্শের অনুভূতি সম্পর্কিত। যেমন, "ঠান্ডা বাতাস" বা "উষ্ণ জলের স্পর্শ"।
গঠন বৈশিষ্ট্য:
চিত্রকল্পের প্রধান গঠন বৈশিষ্ট্য হলো:
বর্ণनात्मकতা:
চিত্রকল্প বর্ণনামূলক ভাষার মাধ্যমে পাঠকের মনে ছবি তৈরি করে।
ইন্দ্রিয় উদ্দীপনা:
এটি পাঠককে তার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা লাভ করতে সাহায্য করে।
সৃজনশীলতা:
চিত্রকল্প লেখকের সৃজনশীলতা এবং ভাষার ব্যবহারের দক্ষতা প্রমাণ করে।
আবেগিক সংযোগ:
এটি পাঠকের মনে আবেগ ও অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
রূপক ব্যবহার:
অনেক সময় চিত্রকল্প রূপক বা প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, "বসন্তের আগমন" বিষয়ক একটি বর্ণনা:
"শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে উঠেছে। পূর্ব দিগন্তে সোনালী সূর্য উঁকি দিচ্ছে, পাখির কলরবে মুখরিত চারপাশ। দখিনা বাতাস ফুলের সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর কচি ঘাসগুলো যেন হাসছে শিশির কণার মুক্তো পরে।"
এই বর্ণনায়, "সোনালী সূর্য", "পাখির কলরব", "ফুলের সুবাস", "কচি ঘাস", "শিশির কণা" ইত্যাদি শব্দগুলি যথাক্রমে দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ এবং স্পর্শের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
অন্যান্য উদাহরণ:
"রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো বটগাছটি যেন কালের সাক্ষী।" (দর্শন, স্মৃতি)
"ক্লান্ত পথিক এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে যেন শান্তি পেল।" (স্পর্শ, স্বাদ)
"রাতের আঁধারে জোনাকির আলো মিটমিট করে জ্বলছে।" (দর্শন, আলো)
চিত্রকল্প সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা লেখার মান উন্নত করে এবং পাঠককে আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভে সাহায্য করে।
অলংকার ও চিত্রকল্পের মধ্যে পার্থক্য কি? তুলনামূলক আলোচনা করে উদাহরণসহ।
Ans: অলঙ্কার ও চিত্রকল্প দুটিই সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অলঙ্কার হল শব্দ ও অর্থের কারুকার্য, যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং পাঠকের মনে বিশেষ অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। অন্যদিকে, চিত্রকল্প হল এমন একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যা পাঠকের মনে একটি ছবি বা দৃশ্য তৈরি করে। সহজ ভাষায়, অলঙ্কার হল অলঙ্করণের কৌশল, আর চিত্রকল্প হল দৃশ্যকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া।
আরও বিস্তারিতভাবে, এই পার্থক্যগুলি আলোচনা করা হলো:
অলঙ্কার (Figure of Speech):
অলঙ্কার হল এক ধরনের ভাষা ব্যবহারের কৌশল, যা ভাষার মাধুর্য ও আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।
এগুলি সাধারণত শব্দ বা অর্থের বিশেষ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
অলঙ্কারের প্রধান কাজ হল ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং পাঠকের মনে একটি বিশেষ অনুভূতি তৈরি করা।
উদাহরণস্বরূপ, উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস ইত্যাদি অলঙ্কার।
যেমন, "তাঁর মন সাদা মেঘের মতো" – এখানে সাদা মেঘের সাথে মনের তুলনা করা হয়েছে, যা উপমা অলঙ্কারের উদাহরণ।
অলঙ্কার ভাষার অলঙ্করণে সাহায্য করে, যা পাঠককে আকৃষ্ট করে।
চিত্রকল্প (Imagery):
চিত্রকল্প হল এমন একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যা পাঠকের মনে একটি দৃশ্য বা ছবি তৈরি করে।
এগুলি ভাষার মাধ্যমে পাঠকের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতি তৈরি করে।
চিত্রকল্পের প্রধান কাজ হল পাঠকের মনে একটি দৃশ্য বা অনুভূতি তৈরি করা, যা তাকে গল্পের সাথে আরও বেশি সম্পর্কিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, "রক্তিম সূর্য অস্ত যাচ্ছে, দিগন্তে সোনার আভা" – এই বাক্যে রঙের ব্যবহার এবং অস্তগামী সূর্যের দৃশ্য পাঠকের মনে একটি ছবি তৈরি করে।
চিত্রকল্প ভাষার মাধ্যমে পাঠকের ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করে এবং গল্প বা কবিতাকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
সংক্ষেপে, অলঙ্কার ভাষার অলঙ্করণের একটি কৌশল, যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, আর চিত্রকল্প হল ভাষার মাধ্যমে পাঠকের মনে দৃশ্য বা অনুভূতি তৈরি করার প্রক্রিয়া।
Ans: অলঙ্কার হল ভাষার অলঙ্করণের একটি কৌশল যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, চিত্রকল্প হল ভাষার মাধ্যমে পাঠকের মনে দৃশ্য বা অনুভূতি তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া।
সংক্ষেপে, অলঙ্কার হল ভাষার অলঙ্কার যা একে আরও আকর্ষণীয় এবং শ্রুতিমধুর করে তোলে। এটি শব্দ বা বাক্যের অলঙ্কৃত ব্যবহার, যা ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা ইত্যাদি অলঙ্কার ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে, চিত্রকল্প হল ভাষার এমন একটি ব্যবহার যা পাঠকের মনে একটি দৃশ্য বা অনুভূতি তৈরি করে। এটি শব্দের মাধ্যমে একটি ছবি বা অনুভূতি তৈরি করার একটি কৌশল। উদাহরণস্বরূপ, "সূর্যাস্তের রক্তিম আভা" বললে পাঠকের মনে একটি নির্দিষ্ট রঙের দৃশ্য তৈরি হয়। এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে লেখক পাঠকের মনে একটি ছবি বা অনুভূতি তৈরি করতে পারেন, যা গল্পটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
সুতরাং, অলঙ্কার ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, আর চিত্রকল্প ভাষার মাধ্যমে পাঠকের মনে ছবি বা অনুভূতি তৈরি করে।
আধুনিক বাংলা কবিতায় চিত্রকল্পের ভূমিকাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে।
Ans: আধুনিক বাংলা কবিতায় চিত্রকল্প (imagery) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা কবিতার সৌন্দর্য ও অর্থকে গভীর করে তোলে। চিত্রকল্প, যা ভাষা ব্যবহার করে পাঠকের মনে ছবি তৈরি করে, কবিতার অভিজ্ঞতাকে আরও উজ্জ্বল ও প্রভাবশালী করে তোলে। এটি কেবল দৃশ্যমান চিত্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, এবং অনুভূতি সহ আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে আকর্ষণ করে।
আধুনিক বাংলা কবিতায় চিত্রকল্পের গুরুত্ব:
অর্থের গভীরতা:
চিত্রকল্প কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। এটি কেবল শব্দের মাধ্যমে তথ্য পরিবেশন করে না, বরং পাঠকের মনে গভীর অনুভূতির জন্ম দেয়।
সংবেদনশীলতা:
চিত্রকল্প কবিতার সংবেদনশীলতাকে বৃদ্ধি করে। এটি পাঠকের ইন্দ্রিয়গুলিকে জাগ্রত করে এবং তাদের কবিতায় বর্ণিত অভিজ্ঞতার সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করে। BBC Maestro জানিয়েছে, "কবিতায় চিত্রকল্প আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পৃক্ত করার জন্য ভাষা ব্যবহার করে।"
স্মৃতিতে অমলিন:
চিত্রকল্প কবিতার মূল বার্তাটিকে পাঠকের মনে গেঁথে দেয়। এটি কবিতাটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলে।
ভাষা ও শৈলীর সৌন্দর্য:
চিত্রকল্প কবিতার ভাষাকে আরও আকর্ষণীয় ও অলঙ্কৃত করে তোলে। এটি কবিতাকে একটি বিশেষ শৈলী প্রদান করে।
নতুন দৃষ্টিকোণ:
চিত্রকল্প পাঠকের মনে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিকোণ তৈরি করতে সাহায্য করে।
আবেগ ও অভিজ্ঞতার প্রকাশ:
চিত্রকল্প লেখকের আবেগ এবং অভিজ্ঞতাগুলিকে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। ResearchGate এর মতে, "চিত্রকল্প পাঠকদের তাদের 'ইন্দ্রিয় অঙ্গকে সক্রিয় করতে এবং কবি বা অন্যান্য লেখকদের উদ্দেশ্য হিসাবে বার্তাটি উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।"
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক, কবি "বৃষ্টির ফোঁটা" শব্দটি ব্যবহার না করে "বৃষ্টির মুক্তোর মতো ঝরে পড়া" ব্যবহার করলেন। এখানে "মুক্তোর মতো" শব্দটি বৃষ্টির ফোঁটার দৃশ্যকল্প তৈরি করে যা কেবল "বৃষ্টির ফোঁটা" শব্দের চেয়ে বেশি অর্থবহ এবং আকর্ষণীয়।
আধুনিক বাংলা কবিতায় চিত্রকল্পের ব্যবহার কেবল একটি শৈলীগত উপাদান নয়, বরং এটি কবিতার মূল উপাদানগুলির মধ্যে একটি। এটি কবিতাটিকে আরও গভীর, অর্থবহ, এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
শ্রবণগত চিত্রকল্পের সংজ্ঞা ও কবিতার ভাষায় তার প্রয়োগ আলোচনা কর।
Ans: শ্রবণগত চিত্রকল্প (Auditory imagery) হল এমন এক ধরনের চিত্রকল্প যা শব্দ, সুর, এবং ধ্বনির মাধ্যমে পাঠকের মনে ছবি তৈরি করে। এটি কবিতার ভাষায় ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল, যা শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রুতি সম্পর্কিত অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং কবিতাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
শ্রবণগত চিত্রকল্পের সংজ্ঞা:
শ্রবণগত চিত্রকল্প হল এমন এক ধরনের চিত্রকল্প যা পাঠকের শোনার অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। এটি শব্দের মাধ্যমে একটি ছবি তৈরি করে যা পাঠক শুনতে পায় বলে মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, "বাতাস আর্তনাদ করছিল" এই বাক্যে, "আর্তনাদ" শব্দটি বাতাসের কান্নার মতো শব্দ তৈরি করে, যা পাঠকের মনে একটি শ্রুতিগত চিত্র তৈরি করে।
কবিতার ভাষায় এর প্রয়োগ:
কবিতায় শ্রবণগত চিত্রকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে কবিরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পাঠককে আকৃষ্ট করেন। যেমন:
অনুভূতি প্রকাশ:
কবিরা তাদের আবেগ এবং অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য শ্রবণগত চিত্রকল্প ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, দুঃখ, আনন্দ, রাগ বা বিষণ্ণতা ইত্যাদি অনুভূতি প্রকাশ করতে শব্দের ব্যবহার করা হয়।
দৃশ্য বর্ণনা:
কবিরা পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য শ্রবণগত চিত্রকল্প ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, বৃষ্টির শব্দ, পাখির গান, বা সমুদ্রের গর্জন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে দৃশ্য বর্ণনা করা হয়।
চরিত্র চিত্রণ:
কবিরা তাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে শ্রবণগত চিত্রকল্প ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তির কণ্ঠস্বর, হাসি, বা কথা বলার ধরন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা যায়।ভাবমূর্তি তৈরি:
কবিরা শব্দের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ভাবমূর্তি তৈরি করতে শ্রবণগত চিত্রকল্প ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, "ঝড়ের আর্তনাদ" শব্দগুচ্ছ একটি শক্তিশালী এবং ভীতিকর চিত্র তৈরি করে।
কাব্যিক ভাষা:
শ্রবণগত চিত্রকল্প কবিতার ভাষাকে আরও আকর্ষণীয় এবং অর্থবহ করে তোলে। এটি কবিতার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
উদাহরণ:
"বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম, যেন প্রকৃতির নীরব কান্না।" এখানে "নীরব কান্না" শব্দটি বৃষ্টির শব্দকে একটি মানবিক অনুভূতির সাথে যুক্ত করে, যা শ্রুতিগত চিত্রকল্প তৈরি করে।
"ক্লান্ত দুপুরে পাখির কলরব" এখানে "পাখির কলরব" শব্দটি একটি আনন্দদায়ক এবং শান্ত পরিবেশের চিত্র তৈরি করে।
"বাতাস শনশন করে বইছে" এখানে "শনশন" শব্দটি বাতাসের শব্দকে চিত্রিত করে, যা পাঠকের মনে একটি নির্দিষ্ট অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
এইভাবে, শ্রবণগত চিত্রকল্প কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা কবিতার ভাষা ও বিষয়বস্তুকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে এবং পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
দৃষ্টিগত চিত্রকল্প কাকে বলে উদাহরণ মই এর বৈশিষ্ট্য লেখ।
Ans: দৃষ্টিগত চিত্রকল্প (Visual Imagery) হল এক ধরনের সাহিত্যিক কৌশল, যেখানে লেখক এমন ভাষা ব্যবহার করেন যা পাঠকের মনকে কোনো দৃশ্য বা বস্তু কল্পনা করতে সাহায্য করে। এটিকে "দৃষ্টির চিত্র" বা "চাক্ষুষ চিত্র" ও বলা যেতে পারে। মই এর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি উল্লম্ব কাঠামো যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আরোহণে সহায়ক।
দৃষ্টিগত চিত্রকল্প:
দৃষ্টিগত চিত্রকল্প, যা চাক্ষুষ চিত্রকল্প নামেও পরিচিত, হল এক ধরনের সাহিত্যিক কৌশল যা পাঠকের ইন্দ্রিয়কে (বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি) এমনভাবে প্রভাবিত করে যে তারা কোনো দৃশ্য, বস্তু বা স্থানকে স্পষ্টভাবে কল্পনা করতে পারে। এটি লেখার একটি শক্তিশালী উপাদান, যা লেখাকে আরও জীবন্ত এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
উদাহরণ:
"রক্তিম সূর্য অস্ত যাচ্ছে, দিগন্তে সোনালী আভা ছড়িয়ে।"
"বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কাঁচের মতো ঝকঝক করছিল।"
"তার সবুজ চোখ দুটি গভীর সমুদ্রে মতো।"
"পুরোনো কাঠের মইটি ধুলোয় ঢাকা ছিল।"
"শিশির কণা ঘাসের উপর মুক্তোর মতো দেখাচ্ছিল।"
মই এর বৈশিষ্ট্য:
মই একটি উল্লম্ব কাঠামো, যা সাধারণত দুটি সমান্তরাল দণ্ড বা স্তম্ভ এবং তাদের মধ্যে আড়াআড়িভাবে সংযুক্ত ধাপ বা কীলক দ্বারা গঠিত।
মই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আরোহণে বা অবতরণে ব্যবহৃত হয়।
মই সাধারণত হালকা ও বহনযোগ্য হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি স্থায়ীও হতে পারে।
মই বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি হতে পারে, যেমন কাঠ, ধাতু, বা দড়ি।
মইয়ের ধাপগুলো সাধারণত এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে মানুষ সহজে ও নিরাপদে উপরে উঠতে পারে।
মই একটি সাধারণ বস্তু হলেও, এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কেবল শারীরিক আরোহণে সহায়ক নয়, বরং রূপক অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন "সাফল্যের মই" বা "জ্ঞানের মই"।
ঘ্রাণগত চিএ প্রকল্প কাকে বলে উদাহরণ সহ এর বৈশিষ্ট্য লেখ।
Ans:
(ভারতীয় সাহিত্য তথ্য ও ধ্বনি রস)
ধ্বনিবাদ কাকে বলে ধ্বনি বাদের মূল সূত্র ও তার শ্রেণীবিন্যাস আলোচনা করো।
Ans: ধ্বনিবাদ হলো ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা কাব্যের আত্মা হিসেবে "ধ্বনি" বা ব্যঞ্জনা বৃত্তিকে বিবেচনা করে। ধ্বনিবাদ অনুসারে, কাব্যের মূল বিষয় হল অর্থের ব্যঞ্জনা, যা শব্দ ও অর্থের পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই মতবাদ আনন্দবর্ধন কর্তৃক উপস্থাপিত হয় এবং অভিনবগুপ্ত প্রমুখ আলংকারিকগণ এর সমর্থন করেন। ধ্বনিবাদের মূল ভিত্তি হলো, কাব্যের বাচ্যার্থ (মূল অর্থ) গৌণ এবং ব্যঙ্গ্যার্থ (প্রতীয়মান অর্থ) প্রধান।
ধ্বনিবাদের মূল সূত্র:
শব্দ ও অর্থের সম্পর্ক:
ধ্বনিবাদে শব্দ ও অর্থের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ তার বাচ্যার্থের মাধ্যমে একটি সাধারণ অর্থ প্রকাশ করে, কিন্তু তার ব্যঞ্জনা (প্রতীয়মান অর্থ) পাঠকের মনে বিশেষ রসের সঞ্চার করে।
ব্যঞ্জনা:
ধ্বনিবাদের মূল ভিত্তি হলো ব্যঞ্জনা। এটি হলো শব্দের এমন একটি অর্থ যা শব্দটির অভিধা বা লক্ষণা থেকে ভিন্ন। ব্যঞ্জনা অর্থ পাঠকের অনুভূতি ও উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল।
ধ্বনিই কাব্যের আত্মা:
ধ্বনিবাদ অনুসারে, কাব্যের মূল সৌন্দর্য ও রস হলো এই ব্যঞ্জনা বা ধ্বনি। এটি কাব্যের প্রাণস্বরূপ, যা পাঠককে আনন্দ ও রসের গভীরে নিয়ে যায়।
ধ্বনিবাদের শ্রেণীবিভাগ:
আনন্দবর্ধন ধ্বনিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করেছেন:
1. অর্থধ্বনি:
যখন কোনো শব্দ বা বাক্যের অর্থের মাধ্যমে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়, তখন তাকে অর্থধ্বনি বলে।
2. বক্তৃধ্বনি:
যখন কোনো শব্দ বা বাক্যের বলার ভঙ্গি বা উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়, তখন তাকে বক্তৃধ্বনি বলে।
আনন্দবর্ধন এই দুই প্রকার ধ্বনি ছাড়াও আরও কয়েকটি উপবিভাগ করেছেন:
1. অলঙ্কারধ্বনি:
যখন কোনো অলঙ্কারের ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়।
2. রসহিতধ্বনি:
যখন কোনো শব্দ বা বাক্য কোনো বিশেষ রসের উদ্রেক করে না, তবে অন্য কোনোভাবে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে।
ধ্বনিবাদের এই শ্রেণীবিভাগ কাব্যের সৌন্দর্য ও রসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এবং পাঠকের মনে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টিতে সহায়ক হয়।
রস বলতে কি বোঝায় বিভিন্ন রসের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দাও এবং উদাহরণ দাও।
Ans: 'রস' বলতে কোনো রচনা (যেমন - কবিতা, নাটক, গান, গল্প ইত্যাদি) পাঠ বা শ্রবণ করে দর্শকের মনে যে ভাবের উদয় হয়, তাকে বোঝায়। এটি এক ধরনের মানসিক অনুভূতি বা রসের আস্বাদন। ভারতীয় অলঙ্কার শাস্ত্রে রসকে নয় প্রকারে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো - শৃঙ্গার, বীর, করুণ, অদ্ভুত, হাস্য, ভয়ানক, বীভৎস, রৌদ্র ও শান্ত।
বিভিন্ন রসের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা ও উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
1. শৃঙ্গার রস:
এই রস রতি (প্রেম) ভাব থেকে উৎপন্ন হয়। এটি মিলনাত্মক (সম্ভোগ) ও বিরহাত্মক (বিপ্রলম্ভ) এই দুই ভাগে বিভক্ত।
উদাহরণ: "নাহি জানি কখন কী..."
2. বীর রস:
এই রস উৎসাহ বা পৌরুষত্ব থেকে উৎপন্ন হয়। এটি যুদ্ধ বা আত্মত্যাগের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
উদাহরণ: "আমি বাংলায় WBI হতে চাই..."
3. করুণ রস:
এই রস শোক বা দুঃখ থেকে উৎপন্ন হয়। প্রিয়জনের বিয়োগ বা অন্য কোনো কারণে শোকের অনুভূতি প্রকাশ পায়।
উদাহরণ: "ওরে ও WBI, তোরা এইবার থাম,
আমার সব কেড়ে নিলি, আর কিছু কি দাম?"
1. অদ্ভুত রস:
এই রস বিস্ময় বা অদ্ভূত কিছু দেখলে উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: "আশ্চর্য! এ কী দেখলাম..."
2. হাস্য রস:
এই রস কৌতুক বা হাস্যকর কিছু দেখলে উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: "ছেলেটি এত হাসছিল যে ..."
3. ভয়ানক রস:
এই রস ভয় বা আতঙ্ক থেকে উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: "অন্ধকারে বাঘ..."
4. বীভৎস রস:
এই রস ঘৃণা বা বিতৃষ্ণা থেকে উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: "লাশটি পচে ..."
5. রৌদ্র রস:
এই রস ক্রোধ বা রাগ থেকে উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ: "আমাকে অপমান!"
6. শান্ত রস:
এই রস নির্লিপ্ততা বা শান্তি থেকে উৎপন্ন হয়। এটি মোক্ষ বা আত্ম-উপলব্ধির অনুভূতি প্রকাশ করে।
উদাহরণ: "শান্ত হও, সব ঠিক হয়ে যাবে।"
বীর রস ও হাস্যরসের বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য আলোচনা করে।
Ans: বীর রস ও হাস্যরস বাংলা সাহিত্যের দুটি প্রধান রস। বীর রস যুদ্ধের ভাব প্রকাশ করে, যেখানে সাহস, পরাক্রম, এবং আত্মত্যাগের মতো গুণাবলী প্রকাশিত হয়। এর স্থায়ীভাব "উদ্যম" বা "বীরত্ব"। অন্যদিকে, হাস্যরস কৌতুক, আনন্দ, বা মজার পরিবেশ তৈরি করে, এবং এর স্থায়ীভাব "হাসি" বা "আনন্দ"।
বীর রসের বৈশিষ্ট্য:
উদ্দীপনা ও উৎসাহ: বীর রসে যুদ্ধ, সংগ্রাম, বা যেকোনো ধরণের কঠিন কাজের জন্য মনে উদ্দীপনা ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
সাহস ও পরাক্রম: এই রসে চরিত্রের সাহস, পরাক্রম, এবং আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ ঘটে।
ত্যাগের মহিমা: বীররসে দেশ, জাতি, বা মহৎ আদর্শের জন্য আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সংঘাত ও যুদ্ধ: যুদ্ধের বর্ণনা, প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা, এবং নিজের বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা বীর রসে প্রকাশ পায়।
গুরুগম্ভীর ভাষা: বীররসের ভাষা সাধারণত গম্ভীর, দৃঢ়, এবং উদ্দীপক হয়ে থাকে।
উদাহরণ:
"ক্ষমা যদি নাহি করো, দেব, দেবগণ,
তবু আমি যুদ্ধ করিব, হে মহাবল!
এ জীবন পণ রেখে, এই মোর পণ,
সংগ্রামে রচিব আমি, জয়-অবদল।"
এই অংশে, যুদ্ধ করার জন্য দৃঢ় সংকল্প এবং শত্রুদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে।
হাস্যরসের বৈশিষ্ট্য:
কৌতুক ও আনন্দ: হাস্যরসে চারপাশের পরিস্থিতি বা ঘটনার কারণে মনে আনন্দের উদ্রেক হয়।
লঘু মেজাজ: হাস্যরসের ভাষা ও বর্ণনা সাধারণত লঘু এবং কৌতুকপূর্ণ হয়ে থাকে।
অতিরঞ্জন ও বৈসাদৃশ্য: কখনো কখনো বাস্তবতার সঙ্গে অতিরঞ্জন বা বৈসাদৃশ্য ঘটিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি করা হয়।
বিদ্রূপ ও কৌতুক: হাস্যরসে অনেক সময় অন্যের দুর্বলতা বা ভুল নিয়ে বিদ্রূপ বা কৌতুক করা হয়।
সহজ ভাষা: হাস্যরসের ভাষা সাধারণত সহজ, সরল এবং শ্রোতাদের কাছে সহজে বোধগম্য হয়।
উদাহরণ:
"বাবু সেজে, ঘোমটা মাথায়,
চলেছেন তিনি হাস্যভরে,
যেন এক বিরাট বোঝা,
বয়ে বেড়াচ্ছেন ধরে।"
এখানে, বাবু সেজে ঘোমটা মাথায় চলার দৃশ্যটি কৌতুক সৃষ্টি করে।
বীর রস ও হাস্যরসের পার্থক্য:
মোটকথা, বীর রস যেখানে সাহস, আত্মত্যাগ ও যুদ্ধের উদ্দীপনা নিয়ে আসে, সেখানে হাস্যরস আনন্দ ও কৌতুক সৃষ্টি করে।
ভারতীয় সাহিত্যে রসের অবস্থান বা মর্যাদা নির্ণয় করো
Ans: ভারতীয় সাহিত্য এবং নাট্যশাস্ত্রে "রস" একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি সাহিত্যের রসাস্বাদন বা নান্দনিক অভিজ্ঞতা যা পাঠক বা দর্শকদের মধ্যে আবেগ সৃষ্টি করে।
রসের সংজ্ঞা:
"রস" শব্দের আক্ষরিক অর্থ রস, সার বা স্বাদ।
ভারতীয় নন্দনতত্ত্বে, রস হল কোনো শিল্পকর্ম (সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, চিত্রকলা ইত্যাদি) থেকে উদ্ভূত নান্দনিক আনন্দ বা অভিজ্ঞতা।
ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্রে (আনুমানিক ২য় শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দ) "রস" ধারণাটি প্রথম বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়।
ভরত "রস্যতে ইতি রসঃ" ("যা আস্বাদিত হয়, তাই রস") এই সংজ্ঞা দিয়েছেন।
রসের উপাদান:
ভরত মুনি "রস" সৃষ্টির জন্য আটটি "স্থায়ী ভাব" (যেমন - রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, উৎসাহ, ভয়, ঘৃণা, বিস্ময়) এবং বিভাব, অনুভাব ও সঞ্চারী ভাব এই উপাদানগুলির কথা উল্লেখ করেছেন।
"বিভাব" হল কারণ যা রস সৃষ্টির জন্য দায়ী, যেমন - আলম্বন বিভাব (যাকে কেন্দ্র করে রস সৃষ্টি হয়) এবং উদ্দীপন বিভাব (যা রসকে উদ্দীপিত করে)।
"অনুভাব" হল রস প্রকাশের বাহ্যিক অভিব্যক্তি (যেমন - চোখের জল, হাসি)।
"সঞ্চারী ভাব" হল ক্ষণস্থায়ী আবেগ যা স্থায়ী ভাবের সাথে যুক্ত হয়ে রসের গভীরতা বৃদ্ধি করে।
রসের গুরুত্ব:
রস হল সাহিত্যের প্রাণ, যা পাঠক বা দর্শককে আনন্দ, দুঃখ, রাগ, ভয় ইত্যাদি বিভিন্ন অনুভূতির অভিজ্ঞতা দেয়।
রস সাহিত্যকর্মকে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য করে তোলে।
রসের মাধ্যমেই সাহিত্য তার নান্দনিক মূল্য অর্জন করে।ভরত মুনির মতে, রস হল সাহিত্যের মূল লক্ষ্য এবং রস সৃষ্টির মাধ্যমেই সাহিত্য তার সার্থকতা লাভ করে।
সুতরাং, ভারতীয় সাহিত্য ও নাট্যশাস্ত্রে রসের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সাহিত্যকর্মের নান্দনিক গুণাবলী এবং রসাস্বাদনের একটি অপরিহার্য অংশ।
রসনিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কিভাবে ঘটে। সাধারণীকরণ তত্ত্বের আলোকে আলোচনা করো।
Ans:
ধ্বনি ও রস পারস্পরিক সম্পর্ক উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করে।
Ans: ধ্বনি ও রস বাংলা সাহিত্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সাধারণভাবে, ধ্বনি বলতে শব্দের উচ্চারণ এবং রস বলতে সাহিত্যের আস্বাদন বা আনন্দকে বোঝায়। এই দুটি ধারণা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি ভালো কবিতা বা গল্প কেবল শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমেই রস সৃষ্টি করতে পারে না, বরং শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থের ব্যঞ্জনা বা ধ্বনিও রস সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ধ্বনি ও রসের পারস্পরিক সম্পর্ক:
ধ্বনি থেকে রসের উৎপত্তি:
আনন্দবর্ধন নামক একজন আলঙ্কারিক ধ্বনিকে কাব্যের আত্মা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, শব্দের অর্থ ছাড়াও, শব্দের অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা বা ধ্বনি রস সৃষ্টিতে সহায়ক। অর্থাৎ, একটি শব্দের মাধ্যমে যে অতিরিক্ত অর্থ বা ভাব প্রকাশিত হয়, তাই রস সৃষ্টি করে
রস আস্বাদনে ধ্বনির ভূমিকা:
রস আস্বাদনের জন্য কেবল শব্দের অর্থ জানলেই চলে না, বরং শব্দের ধ্বনি বা ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করাও জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, "কান্না" শব্দটি শুনলে দুঃখের অনুভূতি জাগে, আবার "হাসি" শব্দটি শুনলে আনন্দের অনুভূতি জাগে। এখানে "কান্না" এবং "হাসি" শব্দ দুটি তাদের অর্থের পাশাপাশি তাদের ধ্বনির মাধ্যমেও আমাদের মনে রসের সৃষ্টি করে।
উদাহরণ:
যদি কোনো কবিতায় দুঃখের বর্ণনা থাকে, তাহলে কবি এমন শব্দ ব্যবহার করবেন যা দুঃখের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। যেমন, "অশ্রু ঝরছে" এই শব্দবন্ধটি দুঃখের ধ্বনি সৃষ্টি করে এবং পাঠকের মনে রসের সঞ্চার করে।
অন্যদিকে, কোনো আনন্দের বর্ণনায় কবি এমন শব্দ ব্যবহার করবেন যা আনন্দের ধ্বনি সৃষ্টি করে। যেমন, "হাসি-কান্না" শব্দ দুটি আনন্দ ও দুঃখ দুটি রসেরই অনুভূতি দিতে পারে।
রস ও ধ্বনির সমন্বিত প্রয়োগ:
একটি সার্থক সাহিত্যকর্মের জন্য ধ্বনি ও রসের যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য। কবি শুধুমাত্র শব্দের অর্থ দিয়ে নয়, বরং শব্দের ধ্বনি এবং তার ব্যঞ্জনা দিয়েও পাঠকের মনে রস সৃষ্টি করতে পারেন।
সুতরাং, ধ্বনি ও রস বাংলা সাহিত্যের দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধ্বনি কাব্যের আত্মা এবং রস সেই কাব্যের আস্বাদন। এই দুটি ধারণা একে অপরের পরিপূরক এবং সাহিত্যের রস আস্বাদনের জন্য উভয়টিরই গুরুত্ব অপরিসীম।
শৃঙ্গার রস সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে।
Ans: শৃঙ্গার রস হলো ভারতীয় সাহিত্য ও শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা সাধারণত প্রেম, আকর্ষণ এবং সৌন্দর্যকে নির্দেশ করে। এটি নয়টি রসের মধ্যে একটি এবং এটি প্রেম, আকর্ষণ বা সৌন্দর্যকে বোঝায়।
সংক্ষেপে, শৃঙ্গার রস হলো:
প্রেম এবং আকর্ষণের রস:
এটি প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেকার আকর্ষণ, রোমান্টিক প্রেম বা কামুক আকর্ষণকে বোঝায়।
সৌন্দর্যের প্রকাশ:
শৃঙ্গার রস সৌন্দর্য এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতার অনুভূতি প্রকাশ করে।
ভারতীয় শিল্পকলায় গুরুত্বপূর্ণ:
এটি ভারতীয় থিয়েটার, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা এবং ভাস্কর্যের মতো বিভিন্ন শিল্পকলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।
স্থায়ীভাব:
শৃঙ্গার রস, রস (অনুভূতি) তৈরির জন্য একটি স্থায়ীভাব (স্থায়ী মানসিক অবস্থা) হিসাবে কাজ করে।
বিভিন্ন রূপে প্রকাশ:
শৃঙ্গার রস বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হতে পারে, যেমন মিলন বা বিরহ।
আরও বিস্তারিতভাবে, শৃঙ্গার রসকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
সংযোজনাত্মক (Sambhog Shringar):
এটি মিলন বা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত।
বিপ্রলম্ভ (Vipralambh Shringar):
এটি বিরহ বা বিচ্ছেদজনিত কষ্টের সাথে সম্পর্কিত।
বিভিন্ন শিল্পকর্মে, যেমন নাটকে, কাব্যে বা নৃত্যে, শৃঙ্গার রস বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়। এটি প্রেম এবং সৌন্দর্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে, যা দর্শকদের বা শ্রোতাদের মধ্যে আনন্দ এবং মুগ্ধতা সৃষ্টি করে।
আরো প্রশ্ন-উত্তর সাজেশন বাকি আছে আপডেট দিচ্ছি ও অবশ্যই ShaRE করো
কোন প্রশ্নের উত্তর বা কোনও সাজেশন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করো !
ReplyDeleteDada education air note ta deo to
ReplyDeleteআজকে এডুকেশনের দিয়ে দেব! Share 💛 https://onlineservicepointb.blogspot.com/2025/07/ugb-iv-4-semester-suggestion-education.html?m=0
Delete