-:CONTEMPORARY ENVIRONMENTAL ISSUES:-
🚨অবশ্যই সবাইকে শোয়ার করে। যাদের দরকার।
💡 সাজেশন & সিলেবাসের প্রশ্ন ও উত্তর। ✍️সবকিছু এখানে পোয়ে জাবে।
পরিবেশগত সমস্যা বলতে কি বোঝো।
উত্তর: পরিবেশগত সমস্যা বলতে বোঝায় পরিবেশের এমন সব সমস্যা বা অবনতি, যা মানুষের কার্যক্রম বা প্রাকৃতিক কারণে পরিবেশের স্বাভাবিক অবস্থা ভঙ্গ করে। এতে পরিবেশের উপাদান যেমন বাতাস, জল, মাটি প্রভৃতি দূষিত হওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদের নিঃশেষ, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি, এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই সমস্যা সাধারণত ক্ষতিকর বা অবাঞ্ছিত পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হয়, যা পৃথিবীর জীবনধারার জন্য হুমকি তৈরি করে।
পরিবেশগত সমস্যার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো:
বায়ু দূষণ
জল দূষণ
মাটি দূষণ
বন উজাড়
ভূমি ক্ষয়
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা
অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং নগরায়ণ
প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ
বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি
শব্দ দূষণ
প্লাস্টিক দূষণ এবং বর্জ্য সংকট
এ ধরনের সমস্যাগুলো স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক মাত্রায় অনুভূত হতে পারে। এসব কারণে পরিবেশের ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা মানব জীবনের পাশাপাশি অন্যান্য জীবজন্তুর জন্যও হুমকি সৃষ্টি করে।
সুতরাং, পরিবেশগত সমস্যা হলো পরিবেশে এমন পরিবর্তন যা পরিবেশ এবং জীবনের জন্য ক্ষতিকর এবং অবাঞ্ছিত, যার ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষয়িষ্ণু হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয় সাধিত হয়।
পরিবেশগত সমস্যা গুলির কারণ এবং সেগুলি সমাধানের জন্য গৃহীত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গুলি আলোচনা করো।
উত্তর: পরিবেশগত সমস্যার কারণ ও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ
পরিবেশগত সমস্যার কারণ
পরিবেশগত সমস্যা হলো মানুষের কার্যকলাপের কারণে প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়া। এ সমস্যার প্রধান কারণগুলো হলো:
দূষণ: বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। কলকারখানা, যানবাহন থেকে বিষাক্ত গ্যাস, রাসায়নিক বর্জ্য ও প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা: মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়ে, বর্জ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বাসস্থানের অভাব হয়।
বন উজাড়: বন ক্ষয় ও উজাড়ের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় এবং মাটির উর্বরতা কমে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, কার্বনগ্যাস নির্গমন ইত্যাদির কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে और এতে তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওজোন স্তরের ক্ষয়: ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পৃথিবীকে সুরক্ষা দেয় এমন ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার: শিল্পায়নের ফলে বায়ু ও পানি দূষণ বাড়ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ
পরিবেশগত সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সংস্থা কাজ করছে:
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP): ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সমন্বয় সাধন করে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা: জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) এর আওতায় Goal 13 দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্মেলন: প্যারিস চুক্তি, কিয়োটো প্রটোকল ইত্যাদি বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন কমাতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রতিশ্রুতি।
টেকনোলজি ও তথ্য বিনিময়: বিশ্বব্যাপী শক্তি দক্ষ প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে পরিবেশের ওপর চাপ কমানো হচ্ছে।
অঞ্চলভিত্তিক ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নীতি গ্রহণ: বিভিন্ন দেশে পরিবেশ আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্পর্কিত চুক্তিতে অংশগ্রহণ।
বেশ কিছু অরাজনৈতিক আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরাম: পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সমাধান খোঁজার জন্য কাজ করে।
এইসব আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় আরও কার্যকর ও সমন্বিত আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
পরিবেশ সংরক্ষণে প্রত্যেক দেশের পাশাপাশি নাগরিক, প্রতিষ্ঠান, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। এতে মানুষ-প্রকৃতি সহাবস্থানে স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হবে।
পরিবেশগত সমস্যা চিহ্নকরন ও তার মোকাবিলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও আন্দোলনের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর: পরিবেশগত সমস্যা চিহ্নকরন ও মোকাবিলায় ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও আন্দোলনের ভূমিকা:
পরিবেশগত সমস্যা এমন একটি অবস্থা যা পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে এবং মানবসহ জীবজগতের জীবিকায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ, বন্যপ্রাণীর হ্রাস, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। এসব সমস্যা মূলত মানুষের দকশীন ব্যবহারের কারণে বা প্রাকৃতিক কারণেও ঘটতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে পরিবেশগত সমস্যা শনাক্ত করার শুরু হয় ১৯ শতকের শিল্প বিপ্লবের সময়। শিল্প কারখানার বৃদ্ধিতে বায়ু ও জলদূষণ বেড়ে যায়, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তখন থেকেই পরিবেশগত সচেতনতার প্রাথমিক ধাপ সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকার গ্রামাঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সামান্য আন্দোলন দেখা দেয়। পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে ব্রিটেনে ক্ষার আইন প্রাসঙ্গিক আইন হিসেবে প্রণীত হয় যা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উদাহরণ।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত আন্দোলন ১৯ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মরুভূমি সংরক্ষণের প্রবল অনুরোধ থেকে শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে শিল্প দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ মানুষের সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিবেশবাদীরা পরিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা, সম্পদের ন্যায্য বন্টন ও মনুষ্য হস্তক্ষেপের ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর জন্য সোচ্চার হন। এই আন্দোলন বিভিন্ন ধরণের মানুষ, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ ও সংগঠন নিয়ে গঠিত বৈচিত্র্যময় সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দার্শনিক আন্দোলনে রূপ নেয়।
ভারত ও বাংলাদেশের পারিপার্শ্বিক এলাকাতেও পরিবেশগত সমস্যার মোকাবিলা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যেমন ভারতের চিপকো আন্দোলন যা বন সংরক্ষণ, নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার লক্ষ্যে কাজ করেছে।
পরিবেশগত সমস্যার মোকাবিলায় ঐতিহাসিক পদক্ষেপগুলি হলো:
শিল্প বিপ্লবের পর বিভিন্ন দেশে দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সম্মেলন (যেমন কিয়টো প্রটোকল, প্যারিস চুক্তি)।
পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতার বৃ্দ্ধি, যেমন বন রক্ষা আন্দোলন, জলবায়ু আন্দোলন।
বিভিন্ন দেশের সরকার ও এনজিও পর্যায়ে পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প গ্রহণ।
এই আন্দোলন ও ঘটনাগুলোর মাধ্যমে মানুষের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দূষণ মোকাবিলায় নানা নীতিমালা ও প্রকল্প চালু হয়েছে, যদিও বর্তমানে পরিবেশগত সমস্যা এত ব্যাপক যে আরও তাতপর্য সহকারে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।
সারাংশে, পরিবেশগত সমস্যা চিহ্নকরন ও মোকাবিলার ঐতিহাসিক ঘটনাবলী মূলত শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে মানব জাতির স্থায়ী উন্নতির জন্য অপরিহার্য একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রমাণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট প্রমাণ। এর ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বরফ গলনের সম্পর্ক: পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফশীট এবং পৃথিবীর বিভিন্ন হিমনদ গলছে। এই গলিত বরফ থেকে অতিরিক্ত পানি সাগরে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে।
সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রসারণ: গরম হওয়া জল তার ঘনত্ব হ্রাস করে এবং পরিমাণে বৃদ্ধি পায় (থার্মাল এক্সপেনশন)। ফলে, একই পরিমাণ জল গরম হলে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পায়।
জলের স্থানান্তর: মানবরচিত কার্যক্রম এবং জলাধার/জলাধারণে পরিবর্তনের কারণে মাটির ওপর থেকে সমুদ্রে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায়।
এই কারণগুলো একত্রে সামগ্রিকভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটায়, যা ১৯৮০-এর দশক থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গত কয়েক দশকে তার গতি দ্রুততর হয়েছে। এই বৃদ্ধি তাপমাত্রার সংগত, যা পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনের সরাসরি ফলাফল। অতএব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হল জলবায়ু পরিবর্তনের একটি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ.
পৃথিবীর সামুদ্রিক বরফ ও তাপমাত্রার এই পরিবর্তনগুলো থেকে বোঝা যায় যে, জলবায়ুর উষ্ণায়ন যত বাড়বে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও তত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, যা উপকূলীয় এলাকা ও মানুষের বাসস্থানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক কেন।
উত্তর: মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক কারণ:
মেরু অঞ্চলে সংরক্ষিত বরফ পৃথিবীর জলবায়ুর সংবেদনশীল ও দ্রুত পরিবর্তিত অংশ। এই বরফ গলায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব প্রতিফলিত হয়।
বরফ গলায় সাগরতলীর পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে উপকূলীয় এলাকার বন্যাসহ ঝুঁকি সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, মেরুর বরফ গলে গেলে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বহু মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বরফ গলা মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রে পরিবর্তন আনে, যেমন মেরু ভালুকসহ অনেক প্রজাতির জীবনযাত্রা ও খাদ্য প্রভাবিত হয়, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ও সংকেত।
মেরু অঞ্চলের বরফ গলাকে "আইস-অ্যালবেডো ফিডব্যাক" নামে একটি ঘটনা ত্বরান্বিত করে, যেখানে বরফ গলে যাওয়ার ফলে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে ভূমধ্যরেখার অন্যান্য অঞ্চলেও প্রভাব ফেলে।
বরফ গলা বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রবল বন্যা, শুষ্কতা, দাবানল, এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, মেরু অঞ্চলের বরফ গলাকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ, এবং অবিস্মরণীয় সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়, যা জলবায়ুর পরিবর্তনের ত্বরিৎ ও প্রভাব বোঝার জন্য একটি প্রাথমিক সতর্ক সংকেত.
এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায় যে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া গ্লোবাল ও টেরেস্ট্রিয়াল জলবায়ু ব্যবস্থার পরিবর্তনের সরাসরি প্রমাণ ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।
বিংশ শতাব্দীতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর: বিংশ শতাব্দীতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হলো:
শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: এই শতাব্দীতে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির দ্রুত বৃদ্ধির ফলে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পায়, যা পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় সাধনে প্রধান ভূমিকা রাখে। যেমন, এই সমস্ত উন্নয়ন ইন্ধন ও শক্তির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানী পাওয়ার উপর নির্ভর করে, যা বহু মাত্রায় পরিবেশের ক্ষতি করে।
পরিবেশ দূষণের বৃদ্ধি: শিল্প, কৃষি, যানবাহন, ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট কার্যক্রমের কারণে বায়ু, জল, ও মাটি দূষিত হয়েছে। এই দূষণ মানব স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, যা পরিবেশ সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তথ্যের বৃদ্ধি: মানুষ পরিবেশগত পরিবর্তন ও দূষণের প্রভাব সম্পর্কে বেশি জেনে উঠেছে। ১৯৭০-এর দশকে মানবতার পরিবেশগত পদচিহ্ন পৃথিবীর বহনক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বোঝা গেলে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়: গ্লোবাল উষ্ণায়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, দাবানল ইত্যাদি পরিবেশগত পরিবর্তন মানব সম্প্রদায় এবং প্রকৃতির উপর বড় প্রভাব ফেলায় মানুষ পরিবেশ রক্ষায় আগ্রহী হয়েছে।
সামাজিক আন্দোলন ও নীতিমালা: বিংশ শতাব্দীর মধ্য-পর্ব থেকে পরিবেশ রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন, পরিবেশ শিক্ষা এবং সরকারী নীতিমালা গ্রহণ শুরু হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
সারমর্মে, বিংশ শতাব্দীতে দ্রুত শিল্পায়ন, পরিবেশ দূষণের ব্যাপকতা, বৈজ্ঞানিক তথ্যের উন্নতি, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং সামাজিক ও নীতিগত উদ্যোগগুলো মিলিত হয়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
পরিবেশগত সমস্যাগুলির বিবর্তনের ধারাটি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর: পরিবেশগত সমস্যাগুলির বিবর্তনের ধারাটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
প্রাথমিক পর্যায়:
মানুষের জীবনে শিল্প বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে তখন পরিবেশগত সচেতনতা খুব কম ছিল।
তখন পরিবেশগত সমস্যা প্রধানত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বারা সৃষ্ট, যেমন বায়ু ও জল দূষণ, বন উজাড় ইত্যাদি।
জনগণ ও সমাজ থেকে প্রভাব:
জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানব কার্যকলাপ যেমন অতিরিক্ত সম্পদের ব্যবহার, বর্জ্য উৎপাদন, কৃষি ও শিল্পায়নে পরিবেশের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ইত্যাদি সমস্যা দৃশ্যমান হয়।
আধুনিক পর্যায়:
পরিবেশগত সমস্যাগুলি যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ু দূষণ, জল দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস একত্রিতভাবে বিশ্বব্যাপী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পরিবেশগত সমস্যাগুলির কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়, বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি ইত্যাদি ঘটছে।
সমাধান ও সচেতনতা বৃদ্ধি:
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়ন, গ্রিনহাউস গ্যাস কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং পরিবেশ আইনের উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির মোকাবিলা শুরু হয়েছে।
সুতরাং, পরিবেশগত সমস্যাগুলির বিবর্তন মূলত শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অতিরিক্ত শোষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধুনিক জীবনের প্রভাবের মাধ্যমে তীব্র রূপ নিচ্ছে, যা এখন বৈশ্বিক পরিসরে একটি গুরুতর জরুরি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি পদ্ধতি আলোচনা কর।
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি প্রধান পদ্ধতি হলো:
জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো (Mitigation)
এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ধীর করা।
প্রাণবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী প্রধান কারণ হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইডের অতিরিক্ত নির্গমন, যা জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে ঘটে।
এই পদ্ধতিতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো (যেমন সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি), শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি, বৃক্ষরোপণ, এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমিয়ে global warming-এর প্রভাব কমানো হয়।
এছাড়াও, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়েও শক্তি ব্যবহার কমিয়ে, পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে এবং শিল্পায়ন গ্রীন করার মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা চালানো হয়।
জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন (Adaptation)
পান যেসব জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যে ঘটেছে বা ঘটতে পারে, তার সাথে মানব ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার খাপ খাওয়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া।
উদাহরণস্বরূপ: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, উপকূলীয় বন সম্পদ সৃষ্টি, লবণাক্ত পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম ফসল উদ্ভাবন, বন্যার বিপদ কমাতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তন।
অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ুর প্রভাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
এই দুইটি পদ্ধতি মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ ও সামাল দেওয়া হয়। প্রথমটি মূলত সমস্যা কমানোর জন্য, আর দ্বিতীয়টি ঘটিত পরিবর্তনের সাথে উপযোগী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য.
বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে।
উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ক্রমাগত এবং দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধিকে বোঝায়। এটি প্রধানত মানুষের কার্যকলাপের ফলে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4) এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) এর কারণে ঘটে থাকে। সূর্যের তাপশক্তি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসে, তখন এটি ভূ-পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং উত্তপ্ত হওয়া পৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরিত হয় মহাকাশের দিকে। কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি এই তাপকে আটকে রাখে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হয় এবং বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাটিকেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণের বৃদ্ধি, যা মূলত মানুষের কার্যকলাপের ফলে ঘটে থাকে। এর মধ্যে প্রধান গ্যাসসমূহ হলো কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড, এবং ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC)।
প্রধান মানবসৃষ্ট কারণসমূহ হলো:
জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, কয়লা, গ্যাস) পোড়ানো
শিল্পায়ন ও কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস
যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ
অরণ্য ধ্বংস ও অতিরিক্ত বৃক্ষ ছেদন
কৃষি কার্যক্রম যা মিথেন ও অন্যান্য গ্যাস উৎপাদন করে
নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি
গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো সূর্য থেকে আসা তাপকে বায়ুমন্ডলে আটকে রাখে, যার কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে। এছাড়া জলীয় বাষ্পের বৃদ্ধি, দাবানল, অগ্নুৎপাত ও প্রাকৃতিক কারণও সামান্য ভূমিকা রাখে।
সারাংশে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হলো মানুষের অতিরিক্ত শিল্পায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, বন উজাড় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে বায়ুমন্ডলে গরম বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া.
বিশ্ব উষ্ণায়নের সম্ভাব্য প্রভাব লেখ।
উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়নের সম্ভাব্য প্রভাব:
মেরু ও হিমবাহ গলন: মেরু অঞ্চলের বরফ ও পার্বত্য হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, যা উপকূলীয় নিম্নভূমি ও দ্বীপসমূহের পানিতে ডুবি যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রের জল বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে বন্যা ও লবণাক্ততার ফলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন: বৃষ্টিপাত কমে অথবা অনিয়মিত হবে, শুষ্ক অঞ্চল বাড়বে, যার ফলে জলাধার ক্ষয় এবং অধঃক্ষেপণ ঘটবে।
শস্য উৎপাদনে প্রভাব: অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি বেড়ে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।
কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন: শুষ্কতা বাড়ার ফলে সেচনির্ভর কৃষিকাজ বাড়বে, আর্দ্র কৃষি কমে শুষ্ক বা মিশ্র কৃষির প্রসার ঘটবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি: ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা প্রভৃতি দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে।
জীববৈচিত্র্য হ্রাস: উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্তি হবে, মেরু অঞ্চলের প্রাণী ও সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রোগ ও স্বাস্থ্য প্রভাব: ম্যালেরিয়া, এলার্জি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাবে।
জলের সংকট: নদী ও ভূগর্ভস্থ জলাশয়ের পরিমাণ কমে পানি সংকট ঘন ঘটাইবে।
এল নিনো ও লা নিনা প্রভাব: এটি বৈশ্বিক আবহাওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও খরার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন পরিবেশ ও মানব সমাজের জন্য গভীর প্রভাব ফেলছে এবং এর প্রতিকার দ্রুত গ্রহণ না করলে তা বৈশ্বিক সংকট তৈরি করবে.
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর: উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব বহুমুখী এবং গুরুতর। প্রধান প্রভাবগুলি সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৃদ্ধির কারণে কৃষিজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষের বড় অংশ কৃষিপ্রধান জীবিকা নির্বাহ করে, তাই ফলন হ্রাসে খাদ্য সংকট এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জলসংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, জলাশয়ের শুষ্কতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে পানি সরবরাহে সমস্যা হয় এবং মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি: তাপপ্রবণতা বৃদ্ধি ও জলাভূমি সংক্রমণ রোগের প্রকোপ বাড়ায়। ক্লোরা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে উন্নয়নশীল দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক মানুষ জীবিকা হারানোর কারণে দারিদ্র্যের দিকে দাবি বাড়বে। পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ভূমি ক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, এবং অভিবাসনের প্রবণতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সহনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতার ঘাটতি: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি, আর্থিক ও সামাজিক ক্ষমতার অভাব থাকায় তারা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।
সার্বিকভাবে, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ কম হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এখানকার জন্য অভিযোজন এবং সন্ত্রাসহায়তা অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধ কি কি আন্তর্জাতিক ও ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে আলোচনা কর।
উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে উল্লেখিত প্রধান ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:
আন্তর্জাতিক পদক্ষেপসমূহ:
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন: ২০১৫ সালে গৃহীত প্যারিস চুক্তি সৌর শক্তি ও বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে সড়ক পরিবহন ও শিল্পে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দেশগুলোর দায়িত্ব নির্ধারণ করে। এর লক্ষ্য হলো বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিমাণ শিল্প বিপ্লবের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা এবং ১.৫ ডিগ্রির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড: উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ধন সংগ্রহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান।
গাছপালা রোপণ ও বন সংরক্ষণ: পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী কার্বন শোষণের জন্য বন ও প্রকৃতির সংরক্ষণ করা।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও চুক্তি: প্রতি বছর COP সম্মেলনে আলোচনা এবং প্রচেষ্টা চলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য।
ব্যক্তিগত পদক্ষেপসমূহ:
নবায়নযোগ্য শক্তিতে স্যুইচ: বাড়ি ও গাড়িতে সৌর বা বায়ু শক্তি ব্যবহার করা, বিদ্যুতের সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা।
পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন: গাড়ি কম ব্যবহার করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের সুপারিশ, হাঁটা বা সাইকেল চালানো। সম্ভব হলে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: মাংসের পরিমাণ কমানো বা শাকাহারী খাদ্য গ্রহণ, কারণ পশুপালন থেকে উৎসৃত মিথেন গ্যাস জামার ক্ষমতা বেশি।
ফুড ও রিসাইক্লিং সচেতনতা: খাদ্য অপচয় কমানো, কম্পোস্টিং, প্লাস্টিক ব্যবহারে কমানো এবং পুনর্ব্যবহার করা।
দায়িত্বশীল কেনাকাটা ও কম ব্যবহার: প্রয়োজন অনুযায়ী কেনা, টেকসই পণ্য বেছে নেওয়া এবং জীবনযাত্রায় কম রাসায়নিক ও ফসলবিহীন পণ্য ব্যবহার করা।
গাছ লাগানো ও প্রকৃতি রক্ষা: নিজের এলাকার আশেপাশে গাছ লাগানো এবং স্থানীয় প্রকৃতি রক্ষা করা।
শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবেশবান্ধব জীবনধারা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্বন্ধে সচেতন হয়ে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা।
আন্তর্জাতিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই পদক্ষেপগুলো সম্পাদন করলে বিশ্ব উষ্ণায়নের ধীরগতি আনা সম্ভব হবে এবং পৃথিবীকে দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যাবে।
বিশ্বের বৃহত্তম চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় সরকার, সংস্থা, সমাজ ও ব্যক্তিগত সকলেই মিলিতভাবে কাজ করলে সফলতা আসবে।
আপনার যদি আরও বিস্তারিত পদক্ষেপ বা নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে জানতে চান, আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।
গ্রীন হাউজ প্রভাব বলতে কী বোঝো।
উত্তর: গ্রীন হাউজ প্রভাব বলতে বোঝানো হয় এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউজ গ্যাসসমূহ সূর্যের বিকিরণ হিসাবে আসা তাপকে আটকে রাখে। সূর্যের আলো পৃথিবীর পৃষ্ঠে এসে তাপ উৎপন্ন করে, কিন্তু সেই তাপের কিছু অংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস দ্বারা শোষিত হয়ে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে পুনরায় বিকিরণ হয়। এর ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
এই প্রক্রিয়াটি ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্গত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ (ইনফ্রারেড) বিকিরণকে বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউজ গ্যাস যেমন জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন ইত্যাদি আটকে রাখে এবং পুনর্বিকিরণ করে, যার ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর কারণেই পৃথিবীলা যথেষ্ট গরম থাকে যা প্রাণ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে এই প্রভাব বেড়ে যাওয়ার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) ঘটছে।
সহজ কথায়, গ্রীন হাউজ প্রভাব হলো বায়ুমণ্ডলের গ্রিনহাউজ গ্যাসের ঘেরা এমন এক পরিবেশ যা সূর্যের তাপ জমা রাখে এবং পৃথিবীকে গরম করে রাখে। এটি শীতপ্রধান দেশে শীতের সময় উদ্ভিদ চাষের জন্য ব্যবহৃত কাচের ঘরের (গ্রিন হাউজ) নামকরণ থেকেই এসেছে.
প্রধান গ্রীন হাউজ গ্যাসের নাম ও তাদের উৎস লেখ।
উত্তর: প্রধান গ্রীন হাউজ গ্যাসসমূহ ও তাদের উৎস:
১. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)
উৎস: জীবাশ্ম জ্বালানী (কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) দহন, বায়ুমণ্ডলীয় বৃক্ষবিদ্ন, স্মরণ ও শিল্প কারখানায় রাসায়নিক বিক্রিয়া।
২. মিথেন (CH4)
উৎস: কয়লা, তেল, গ্যাস নির্মাণ এবং পরিবহন, গবাদি পশুর পাচন প্রক্রিয়া, ধানের ফসল চাষ, বর্জ্যাভিক্ষেপ।
৩. নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)
উৎস: কৃষি (সার ব্যবহার, মাটি চাষ), রাসায়নিক এবং কারখানায় দহন, বর্জ্যজল নিষ্কাশন।
৪. ওজোন (O3)
উৎস: ট্রোপোস্ফিয়ারে রাসায়নিক বিক্রিয়া, যা গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসেবে কাজ করে।
৫. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs), হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs) ও অন্যান্য ফ্লুরিনযুক্ত গ্যাস
উৎস: শিল্প প্রক্রিয়া, বায়ুসংগৃহণ, ঠাণ্ডা রাখার যন্ত্র।
৬. জলীয় বাষ্প (H2O)
উৎস: প্রকৃতিগত, যেমন বাষ্পীভবন এবং বাষ্পীয় বাষ্প।
এই গ্রীন হাউজ গ্যাসগুলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং প্রধানত মানুষের কর্মকাণ্ড যেমন জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার, কৃষি ও শিল্প কারখানার কারণে তাদের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে.
প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস প্রভাবে গুরুত্ব কি।
উত্তর: প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস প্রভাবের গুরুত্ব:
পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস প্রভাব গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন) দ্বারা সহজেই ঘটে, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে নির্গত তাপবিশেষকে বায়ুমণ্ডলের নিচু স্তরে আটকে রাখে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা মোটামুটি ১৪°C (প্রায় ৫৭°F) এ থাকে, যা প্রাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। যদি এই প্রভাব না থাকত, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় -১৮°C হত এবং পৃথিবী অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে যেত, যেখানে প্রাণ নির্বাহ সম্ভব হতো না।
জীবনের জন্য আবাস উপযোগী তাপমাত্রা সৃষ্টি: এই প্রাকৃতিক প্রভাব পৃথিবীতে জলীয় বাষ্পের মত গ্যাসের মাধ্যমে তাপ আটকে রেখে, প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় উষ্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সৌর বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শোষণ ও বিকিরণের নিয়ন্ত্রণ: সূর্যের থেকে আসা দৃশ্যমান আলো পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং তারপর পৃথিবী দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি (ইনফ্রারেড) প্রকাশ করে, যা গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ শোষণ করে এবং পুনরায় তাপ নিশ্চিত করে পৃষ্ঠে ফেলে দেয়। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা হঠাৎ বেশী বা কমে যায় না।
পৃথিবীর বাসযোগ্য পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ: পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ও টেকসই জীবনের জন্য এই প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস প্রভাব অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে।
সংক্ষেপে, প্রাকৃতিক গ্রিনহাউস প্রভাব ছাড়া পৃথিবী এতটাই ঠান্ডা হত যে প্রাণের প্রতিষ্ঠা ও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। তাই এই প্রভাব পৃথিবীর জলবায়ু স্থিতিশীল রাখা এবং প্রাণের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রীন হাউজ প্রভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মধ্যে সম্পর্ক কি।
উত্তর: গ্রীন হাউজ প্রভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। গ্রীন হাউজ প্রভাব হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে কিছু গ্যাস (যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ওজোন এবং জলীয় বাষ্প) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্যের তাপ ধরে রাখে। এগুলো সূর্যের তাপ বিকিরণকে বায়ুমণ্ডলে আটকে রেখে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ রাখে, যা জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য।
তবে জনসাধারণের কর্মকাণ্ড, যেমন জীবাশ্ম ইন্ধন পোড়ানো, বন উজাড়, কৃষি ও শিল্প কার্যক্রমের কারণে এই গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে, যা গ্রীন হাউজ প্রভাবকে অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন নামে পরিচিত। এই উষ্ণতা অনেক ধরনের জলবায়ু পরিবর্তন ঘটায়, যেমন বরফপাহাড় গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রবল বন্যা ও খরা ইত্যাদি।
সংক্ষেপে বলা যায়, গ্রীন হাউজ প্রভাব পৃথিবীর তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং জীবনকে সহায়তা করে, কিন্তু মানুষের ক্রিয়াকলাপ এই প্রভাবকে বাড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন সৃষ্টি করে, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গ্রীন হাউজ প্রভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো পরস্পর পরিপূরক এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ হলো গ্রীন হাউজ গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণ।
মানব সৃষ্ট কারণে গ্রীন হাউজ প্রভাবের তীব্রতা কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলাফল গুলি কি কি।
উত্তর: মানব সৃষ্ট কারণে গ্রীনহাউজ প্রভাবের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মূলত নিম্নলিখিত কারণে:
জীবাশ্ম-based জ্বালানি যেমন কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর মাধ্যমে大量 কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নির্গমন হয়।
অরণ্য উজাড়করণ (deforestation) ও গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ কমে যাচ্ছে।
কৃষিতে বিশেষ করে গবাদিপশু পালন থেকে মিথেন (CH4) এবং জমিতে সার ব্যবহারে নিট্রাস অক্সাইড (N2O) নির্গত হয়।
শিল্প-কারখানা, পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি মানুষের ব্যস্ত কার্যক্রম এই গ্যাসগুলোর মাত্রা বৃদ্ধি করছে।
এই অতিরিক্ত গ্রীনহাউজ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে একটি ঘন আবরণ তৈরি করছে, যা সূর্যের তাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে রাখছে এবং তীব্র তাপ বৃদ্ধি করছে। এ কারণে বিশ্ব উষ্ণায়ন তীব্র হচ্ছে।
এর ফলাফলসমূহ:
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা গ্লোবাল তাপমাত্রার বৃদ্ধি, যা পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা অনিয়মিতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে।
গ্লাশিয়ারের দ্রবণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বন্যা, উপকূলীয় শহরের পানিতে ডুব ইত্যাদি আঘাত প্রবল হচ্ছে।
তীব্র ঝড়, বন্যা, খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, যেমন বন্যপ্রাণীর বাসস্থান নষ্ট হওয়া এবং কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব।
সমুদ্রের অম্লীয়তা বৃদ্ধি যা সামুদ্রিক জীবজগতের জন্য হুমকি।
বায়ু, পানি, ও মাটির দূষণ বৃদ্ধি।
সংক্ষেপে, মানবসৃষ্ট গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পৃথিবীর গ্রীনহাউজ প্রভাবকে তীব্র করছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবর্তিত জলবায়ুর মাধ্যমে পরিবেশ, মানুষ ও প্রকৃতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানবজাতি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এই প্রভাব কিছুটা কমানো সম্ভব.
মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি কাকে বলে।
উত্তর: মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হলো এমন একটি প্রবল বৃষ্টিপাত যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হয় এবং যার ফলে হঠাৎ করে বন্যা, ভূমিধ্বস, হড়পাবান ইত্যাদি বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আসলে, মেঘে কোনও শারীরিক বিস্ফোরণ হয়ে থাকে না; বরং মেঘের মধ্যে জলবাষ্প এবং বৃষ্টির জলবিন্দুগুলো এত দ্রুত জমে যায় এবং ভারী হয়ে যায় যে মেঘ আর সেই সমস্ত জল ধরে রাখতে পারে না। তখন একটি নির্দিষ্ট এলাকার ওপর থেকে খুব দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে জল বর্ষণ হয়, যাকে আমরা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বলি।
বিশেষ করে, এই ধরনের বৃষ্টি সাধারণ বৃষ্টির থেকে আলাদা কারণ এটি কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর ঘটে থাকে। এটি প্রধানত কিউমুলোনিম্বাস (Cumulonimbus) নামক বড় এবং ঘন মেঘ থেকে হয়, যা প্রায় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১০০০-২৫০০ মিটার উচ্চতায় থাকে।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফলে বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে যেমন ভূমিধ্বস, নদীর হঠাৎ বন্যা, বাড়িঘর ধ্বংস ইত্যাদি। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হলেও ডপলার রাডার ব্যবহার করে কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। এই ধরনের বৃষ্টি প্রধানত পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে থাকে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর ঘটনা বাড়তে পারে।
সংক্ষেপে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বা ক্লাউডবাস্ট হলো এমন প্রবল ও অল্প সময়ের বৃষ্টি যা মেঘ থেকে হঠাৎ করেই প্রচুর পরিমাণে জল নামার ফলে সৃষ্টি হয়, যা এলাকা বিশেষে ভয়াবহ বন্যা ও ধ্বংস ঘটায়।
হড়পাবান কি এর একটি কারণ লেখ।
উত্তর: হড়পাবান হঠাৎ এবং আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি প্রকারের বন্যা। এর একটি প্রধান কারণ হলো মেঘ বিস্ফোরণ বা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। এই ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড মাত্রায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়, যা নদী বা জলাধারগুলোকে অতিরিক্ত জল দিয়ে পূর্ণ করে ফেলে। এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে নদী পথে বাঁধ সৃষ্টি হয়ে যখন সেই বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, তখনও হড়পাবান হয়। কখনো কখনো হিমবাহ বা বরফের গলনও হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে জলস্তর বাড়িয়ে হড়পাবানের কারণ হতে পারে। মানবসৃষ্ট বাঁধ ভেঙে যাওয়াও হড়পাবানের একটি কারণ হতে পারে। এই কারণগুলো একত্রিত হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর জল প্রবাহিত হওয়ার কারণে হড়পাবান ঘটে, যা দ্রুত এবং ধ্বংসাত্মক হয়.
সারাংশে, হড়পাবানের একটি কারণ হলো স্বল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত এবং তীব্র বৃষ্টিপাত বা মেঘ বিস্ফোরণ।
মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ও হড়পাবান মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর: মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পাবান মধ্যে পার্থক্য:
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (Cloudburst) হলো এক প্রকারের অত্যন্ত প্রবল ও আকস্মিক বৃষ্টি, যা সাধারণ বৃষ্টির থেকে অনেক বেশি মাত্রার হয়। এই বৃষ্টি খুব অল্প সময়ের মধ্যে (প্রায় ১ ঘণ্টার মধ্যে) সীমিত একটি এলাকায় প্রচণ্ড পরিমাণে ঘটে, সাধারণত প্রতি ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশী বৃষ্টি হয়। এটি মূলত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে হয়, যেখানে খুব দ্রুত উপরের দিকে উষ্ণ বাতাস উঠার ফলে জলবাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ গাঢ় ও ভারী হয়। একপর্যায়ে মেঘ আর সেই জল ধারণ করতে না পেরে নির্দিষ্ট স্থানে প্রচণ্ড বৃষ্টির আকারে জল ফেটে পড়ে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে হঠাৎ করে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, যা প্রায়শই বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও ভূমিধসের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফলে এক সঙ্গে প্রচুর জল উপরের পাহাড় থেকে নেমে আসায় হড়পাবান সৃষ্টি হয়ে থাকে।
হড়পাবান (Flash Flood) হলো আকস্মিক ও দ্রুত বন্যা, যা সাধারণত ৬ ঘণ্টার কম সময়ে ঘটে। হড়পাবান মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর জলস্তর খুব দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়, যা নদীর তীরে অবস্থিত মানুষের বসতি, জমি ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দেয়। এর মূল কারণ হতে পারে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, উচ্চ এলাকার বরফ বা তুষার গলনের ফলে জলভর্তি হওয়া, বাঁধ ভাঙা, অথবা অন্য কোনও কারণে পানির ব্যাপক প্রবাহ। হড়পাবানের সময় প্রচণ্ড বন্যা হঠাৎ আসে এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। এটি সাধারণ বন্যার থেকে দ্রুতগতির এবং বিস্তৃত আকারে বেশি ক্ষতি করে।
সংক্ষিপ্ত পার্থক্য:
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হলো প্রচণ্ড পরিমাণে আকস্মিক বৃষ্টি যা মেঘ থেকে ফেটে পড়ে, আর হড়পাবান হলো সেই বৃষ্টির জের ধরে বা অন্য কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টির সময় নির্দিষ্ট এলাকা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড বৃষ্টি পায়, আর হড়পাবান হলো তীব্র বৃষ্টির ফলে নদীর জল স্তর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সাথে যুক্ত, আর হড়পাবান হতে পারে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বা অন্যান্য পানির দ্রুত আগমনের কারণে।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে প্রায়শই শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে, আর হড়পাবান মূলত জল বৃদ্ধি ও আকস্মিক বন্যা।
সারাংশে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আর হড়পাবান একই সাবলীলভাবে যুক্ত দুটি ঘটনা, যেখানে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি তীব্র বৃষ্টিপাতকে বোঝায় এবং হড়পাবান সেই বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট আকস্মিক ও ধ্বংসাত্মক বন্যা।
আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান, বলুন।
পার্বত্য অঞ্চলে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ও হড়পাবান প্রকোপ বেশি দেখা যায় কেন।
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি এবং হড়পাবান বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণ হলো ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়ার মিলিত প্রভাব।
মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির কারণ:
পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি ভূমির কারণে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠতে বাধ্য হয়।
এই উষ্ণ বাতাস যখন ঠান্ডা বায়ুর সংস্পর্শে আসে, তখন ঘন কিউমুলোনিম্বাস ধরণের মেঘ তৈরি হয়।
মেঘে থাকা জলীয় বাষ্প ক্রমশ জমা হয় কিন্তু স্বাভাবিক বৃষ্টিতে পরিণত হতে না পারায় মেঘ আরও ভারি ও ঘনীভূত হয়ে ওঠে।
এক পর্যায়ে মেঘ সেই পরিমাণ জল ধরে রাখতে না পেরে হঠাৎ ফেটে যায় এবং প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়, যা মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি নামে পরিচিত।
হড়পাবান কেন হয়:
মেঘ ভাঙ্গার কারণে পাহাড়ি এলাকায় প্রচণ্ড ও হঠাৎ বৃষ্টিপাত হয়।
পাহাড়ের ঢালে বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহিত হয়ে নদী ঝর্ণা আকারে ধসে পড়ে, যা দ্রুত জলস্তর বাড়িয়ে দেয়।
পার্বত্য এলাকার খাড়া ভূ-লক্ষণের জন্য এই জল প্রবাহের গতি দ্রুত ও প্রবল হয়।
ফলে নদী বা উপত্যকায় আকস্মিক, প্রচণ্ড বন্যা সৃষ্টি হয়, যা হড়পাবান নামে পরিচিত।
এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলের জমে থাকা বরফ গলাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বন্যার প্রকোপ বাড়ায়।
অতিরিক্ত তথ্য:
পার্বত্য অঞ্চল, যেমন হিমালয়ের পাদদেশ, দার্জিলিং, উত্তরাখণ্ড, সিকিম এলাকায় এই ধরনের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
এই কারণে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ও হড়পাবানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বেশি থাকে এবং এর জন্য পূর্বাভাস দেওয়াও কঠিন।
উপসংহারে, পার্বত্য অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, বায়ুপ্রবাহ, পাহাড়ের উচ্চতা ও তাপমাত্রার পার্থক্যের ফলেই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি এবং হড়পাবান প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই দুর্যোগগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও আচমকা হওয়ায় যথাযথ পূর্বাভাস দেয়াও কঠিন.