ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভারতবর্ষকে সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করার অর্থ হলো ভারতের সংবিধানে নির্ধারিত যে মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তার শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রগঠনকে নির্ধারণ করে, সেগুলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা।
সার্বভৌম (Sovereign): ভারত একটি সার্বভৌম দেশ হওয়ায় তার উপর কোনো পররাষ্ট্রী শক্তির শাসন বা আধিপত্য নেই। তার নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ এবং শাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক (Socialist): ভারত রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক হওয়ার অর্থ হলো রাষ্ট্রের নীতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। এটি সাধারণ জনগণের জীবনে সামাজিক সমতা ও সাম্যের প্রচারে গুরুত্ব দেয় এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।
ধর্মনিরপেক্ষ (Secular): ধর্মনিরপেক্ষ অর্থ হলো ভারত রাষ্ট্র কোনো একটি ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকার করে না; সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল এবং জনগণের ধর্মচয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র (Democratic Republic): ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে দেশের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা হয়, যারা দেশের শাসন পরিচালনা করে। একনায়কতন্ত্র শব্দের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে ভারতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান, এবং দেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়।
এই চারটি বৈশিষ্ট্য একসাথে মিলিত হয়ে ভারতের সংবিধানের মূল কাঠামো গঠন করে এবং ভারতের শাসন ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের ধর্মবোধকে নির্ধারণ করে।
ভারতের গণপরিষদের গঠন কিভাবে হয়েছিল গণপরিষদের মূল উদ্দেশ্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল ভারতের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে। এটি ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনার অধীনে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত হয়। গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮৯, যার মধ্যে ২৯২ জন ছিল ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশের প্রতিনিধি, ৯৩ জন দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন প্রধান কমিশনার প্রদেশের প্রতিনিধি। দেশভাগের পর সদস্য সংখ্যা কিছু পরিবর্তিত হয়ে প্রায় ২৯৯ হয়। গণপরিষদের সদস্যরা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত ছিলেন, প্রাদেশিক পরিষদগুলি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গণপরিষদে আসতেন।
গণপরিষদের গঠনটি এমনভাবে করা হয়েছিল যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন মুসলিম ও শিখদের জন্য আলাদা প্রতিনিধিত্ব ছিল, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চল থেকে সদস্য ছিল। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন হয় ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬ সালে।
গণপরিষদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৬ সালে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু কর্তৃক একটি "উদ্দেশ্য প্রস্তাব" গৃহীত হয়েছিল যা সংবিধানের মৌলিক আদর্শ ও দর্শন স্থাপন করেছিল। এই প্রস্তাবে গণপরিষদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা মূলত ছিল:
ভারতের একটি সার্বভৌম, সংবিধানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠন করা
মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা
সকল ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা
জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বৃদ্ধি করা
গণপরিষদ প্রায় তিন বছর ধরে ১১৪ দিনে খসড়া সংবিধান নিয়ে আলোচনা করেছে এবং অবশেষে ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে সংবিধান অনুমোদিত হয়। ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে ভারত প্রজাতন্ত্র ঘোষণা এবং সংবিধান কার্যকর হয়।
সংক্ষেপে, ভারতের গণপরিষদ ছিল একটি নির্বাচিত সংবিধান প্রণয়ন পরিষদ যা বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন ভারতের জন্য একটি আধুনিক ও গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করা.
ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত সাম্যের অধিকারটি সম্পর্কে আলোচনা কর এবং এই অধিকারের ব্যতিক্রমগুলি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে সাম্যের অধিকারটি একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, যা ধারা ১৪ থেকে ১৮ অবধি প্রদত্ত। এই অধিকার নিশ্চিত করে যে ভারতের অন্তর্গত সব ব্যক্তিকে আইনের সামনে সমান সুরক্ষা এবং সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে, কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই। সাম্যের অধিকার গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ হয় এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতীয়তা বা সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয় না।
ধারা ১৪ অনুযায়ী, “ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে আইনের দৃষ্টিতে সমতা বা আইনের দ্বারা সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।“ ধারা ১৫ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও জন্মস্থান নির্বিশেষে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে। ধারা ১৬ সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। এর পাশাপাশি ধারাগুলিতে অস্পৃশ্যতার বিলুপ্তি এবং শিরোনাম বিলুপ্তির provisions রয়েছে। সাম্যের অধিকার মানুষের স্বাধীনতা এবং মর্যাদার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটায়।
সাম্যের অধিকারের কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও রয়েছে। জবাবে বলা যায়, আইন সম্মুখ সমতা নীতি কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত শ্রেণীবিভাগ (reasonable classification) গ্রহণ করতে পারে। যেমন, বয়স, আয়, শিক্ষা বা পেশার ভিত্তিতে ভিন্নতা নির্ধারণ করা। এছাড়া সমাজের কল্যাণার্থে বিশেষ পরিস্থিতিতে পৃথক আচরণ গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমন যুদ্ধাবস্থায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপ। এছাড়াও, ব্যক্তিগত আইন যেমন মুসলিম বা হিন্দু ব্যক্তিগত আইন, রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে।
অন্যান্য ব্যতিক্রমের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থার বিশেষ নিয়ম, বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়া, এবং নিরাপত্তা বা সাংবিধানিক সংস্থা বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করা। এইসব ব্যতিক্রম সাম্যের নীতিকে প্রয়োগের সময় বাস্তবতার বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সারাংশে, ভারতীয় সংবিধানের সাম্যের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের আইনের সামনে সমান অধিকার ও সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করে, তবে রাষ্ট্রের কার্যকরী ও সামাজিক প্রয়োজন মাফিক এর কিছু যুক্তিসঙ্গত ব্যতিক্রম রয়েছে যা সুসংবিধানিক ও আইনানুগ স্বীকৃত। এটি মূলত একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মূলে অবস্থান করে।
ভারতীয় সংবিধানে উল্লেখিত স্বাধীনতার অধিকারটি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে স্বাধীনতার অধিকার মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম এবং এটি অনুচ্ছেদ ১৯ থেকে ২২ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অধিকারটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং তাদের মতামত, ধর্ম, সংগঠন, চলাচল ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
স্বাধীনতার অধিকার এর প্রধান উপাদানসমূহ হলো:
বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ১৯(১)(ক)): ভারতীয় নাগরিকরা তাদের মতামত, বিশ্বাস, চিন্তা ও ধারণা মুক্তভাবে প্রকাশ করার অধিকার রাখে। এই অধিকার নিরঙ্কুশ নয়; এটি ভারতের সার্বভৌমত্ব, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, নৈতিকতা ও রাষ্ট্র নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু শর্তে সীমাবদ্ধ হতে পারে।
সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ১৯(১)(বি)): নাগরিকরা অস্ত্রশস্ত্রহীন শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা পান।
সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৯(১)(গ)): নাগরিকরা আইনানুযায়ী সংগঠন বা সমিতি গঠনের অধিকার রাখে।
ভারতবর্ষের যেকোন স্থানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৯(১)(ঘ))।
নাগরিকদের জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ২১): আইনানুযায়ী প্রক্রিয়া ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
গ্রেফতার ও আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা (অনুচ্ছেদ ২২): গ্রেফতার ও আটকের সময় নাগরিকদের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা ও অধিকার সংরক্ষিত হয়, যেমন গ্রেফতারির কারণ জানা, দ্রুত ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিতির অধিকার ইত্যাদি।
স্বাধীনতার অধিকার নাগরিকদের স্বাধীনভাবে জীবনের সম্ভাবনা অর্জন এবং মর্যাদার সাথে জীবনযাপন করার বিধান দেয়। তবে, এই অধিকার নিরবচ্ছিন্ন নয়; রাষ্ট্রের স্বার্থ, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার সুরক্ষার উদ্দেশ্যে আইনগত সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যেতে পারে।
সার্বিকভাবে, ভারতীয় সংবিধানের এই অধিকারগুলি উদার ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা প্রদান করে।
ভারতের নাগরিকদের বিভিন্ন মৌলিক কর্তব্য গুলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ভারতের নাগরিকদের ১১টি মৌলিক কর্তব্য আছে, যা ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত হয়েছে (অনুচ্ছেদ ৫১ (এ))। এই কর্তব্যগুলি হলো:
সংবিধান এবং তার আদর্শ, প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করা মহান আদর্শ লালন ও অনুসরণ করা।
ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং রক্ষা করা।
দেশরক্ষা এবং জাতীয় সেবায় আত্মনিয়োগের জন্য আহ্বানে সাড়া দেওয়া।
ধর্মগত, ভাষাগত, আঞ্চলিক বা শ্রেণীভিত্তিক বিভেদ ঊর্ধ্বে থেকে সকল ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলা এবং নারী জাতির মর্যাদাহানিকর প্রথা পরিহার করা।
দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।
বনভূমি, হ্রদ, নদী, বন্যপ্রাণীসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও জীবজন্তুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবিকতা, অনুসন্ধিৎসা এবং সংস্কারমূলক মনোভাব সম্প্রসারিত করা।
জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসা থেকে বিরত থাকা।
জাতীয় উন্নতি ও প্রগতির লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো।
৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রত্যেক শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করা (পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কর্তব্য).
এগুলো আইনগতভাবে প্রয়োগযোগ্য নয়, তবে নাগরিকদের দেশ এবং সমাজের উন্নতির জন্য অনুশীলন করা উচিত.
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
বৃহত্তম লিখিত সংবিধান: বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বিশদ লিখিত সংবিধান, মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ধার নেওয়া ধারণা অনুযায়ী তৈরি।
সংবিধানের প্রাধান্য: সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য সকল আইন সংবিধানের অধীনে থাকে।
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা: বৃটিশ মডেল অনুসরণ করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা গঠন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ।
মৌলিক অধিকার: নাগরিকদের জন্য ৬টি মৌলিক অধিকার নির্ধারণিত হয়েছে, যেমন সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদি।
ধর্মনিরপেক্ষতা: ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যেখানে কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই।
ফেডারেল ব্যবস্থা: ভারত একটি অর্ধ-ফেডারেল রাষ্ট্র, যেখানে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগ স্বাধীন।
নমনীয়তা ও অনমনীয়তার মিশ্রণ: সংবিধান কিছু ধারা সংশোধনযোগ্য, আবার কিছু ধারা সংশোধনের বাইরে।
রাষ্ট্র পরিচালনা নির্দেশমূলক নীতি: রাষ্ট্রের পরিচালনা ও সামাজিক নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধান ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকরী হয় এবং ডঃ বি আর আম্বেদকর এর নেতৃত্বে রচিত। এটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বর্ণনা, আইন, বিচার বিভাগ ও নাগরিক অধিকারের সুসংগঠিত কাঠামো নির্ধারণ করে।
ভারতীয় গণপরিষদের গঠন সম্পর্কে আলোচনা কর।
ভারতীয় গণপরিষদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যসমূহ আলোচনা কর।
ভারতীয় গণপরিষদের গণ চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় গণপরিষদ ছিল ভারতের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত একটি প্রতিনিধি পরিষদ, যা ১৯৪৬ সালে গঠিত হয় এবং স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে দেশের প্রথম সংসদ হিসেবে কাজ করেছে। গণপরিষদ সদস্যরা প্রাদেশিক পরিষদের মাধ্যমে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন, যেখানে মোট সদস্যসংখ্যা ছিল ৩৮৯, যা দেশভাগের পর কমে ২৯৯ এ নেমে আসে। এটি অনেক বৈচিত্র্যময় প্রতিনিধিত্ব বহন করেছিল যেমন বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, অঞ্চল এবং লিঙ্গ থেকে প্রতিনিধি ছিল। মুসলিম ও শিখ সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়েছিল।
গণপরিষদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারতের জন্য একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করা, যা ১৯৪৯ সালে গৃহীত হয় এবং ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখে কার্যকরী হয়। সংবিধান প্রণয়নের সময় গণপরিষদ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য মোট ২২টি কমিটি নিয়োগ করে, যার মধ্যে ছিল খসড়া কমিটি, ইউনিয়ন পাওয়ার কমিটি, সংবিধান কমিটি, মৌলিক অধিকার ও সংখ্যালঘু সংক্রান্ত কমিটি ইত্যাদি।
গণপরিষদে কংগ্রেস পার্টির সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন, কিন্তু এখানে রক্ষণশীল থেকে মার্কসবাদী, পুনরুজ্জীবনবাদী সহ বিভিন্ন মতামতের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মুসলিম লীগ গণপরিষদ বয়কট করেছিল কিন্তু পরে কয়েকজন সদস্য যোগ দিয়েছিলেন।
গণপরিষদের কার্যক্রম তিন বছর ধরে বিস্তৃত ছিল এবং এটি ভারতের সংবিধানের ভিত্তি স্থাপন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এর সময় জওহরলাল নেহরু, বি আর আম্বেদকর, রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রমুখ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গণপরিষদ ছিল একটি অস্থায়ী সাংবিধানিক পরিষদ, যা ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সংসদ গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
সংক্ষেপে, ভারতীয় গণপরিষদের গণ চরিত্র ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক ও সংবিধান প্রণয়নকরণের মিশ্রিত ঐতিহাসিক মাধ্যম, যা দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও রাজ্যের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও সর্বজনীন স্বাধীনতার লক্ষ্যে সংগঠিত হয়েছিল। এটি মূলত একটি সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সহযোগী প্ল্যাটফর্ম যা ভারতীয় গণতন্ত্র ও সংবিধানের ভিত্তি গঠন করেছে।
ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তাৎপর্য বা গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা, যা সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও নীতিগুলোকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করে এবং এর কর্তৃত্বের উৎস নির্দেশ করে। এটি ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে গৃহীত হয়েছিল এবং ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখে কার্যকর হয়, যা ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়।
সংবিধানের প্রস্তাবনার তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিম্নরূপ:
সংবিধানের দর্শন ও আদর্শ উপস্থাপন: প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি সার্বভৌম (স্বরাজ্যিত), সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার সংকল্প প্রকাশ পায়। এটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা, সমতা, সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ প্রতিফলিত করে।
জনগণের সার্বভৌমত্বের ঘোষণা: "আমরা ভারতীয় জনগণ" শব্দ দ্বারা নির্দেশ করা হয় যে, সত্যিকার ক্ষমতা জনগণের কাছে এবং সংবিধান মানুষের তৈরি, মানে জনগণই রাষ্ট্রের আধার।
শাসনব্যবস্থার কাঠামো নির্দেশনা: প্রস্তাবনা ভারতের শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য যেমন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি নির্ধারণ করে।
ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের নিশ্চয়তা: সমস্ত নাগরিকের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়; চিন্তা, বিশ্বাস এবং ধর্মচর্চায় স্বাধীনতা; মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার সমতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বর্ধন: ব্যক্তির মর্যাদা রেখে দেশের ঐক্য ও সংহতির উদ্দেশ্যে সৌভ্রাতৃত্বের দর্শন কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যুক্তিশক্তির সাহায্য: সংবিধানের কার্যকরী অংশের কোনো শব্দ বা বাক্যের অর্থ অস্পষ্ট হলে প্রস্তাবনা অস্পষ্টতা দূর করতে সহায়ক।
আদালতসমূহের জন্য নির্দেশিকা: প্রস্তাবনা সংবিধানের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিচারিক নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক গুরুত্ব: প্রস্তাবনা ভারতীয় জাতির আদর্শ ও লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে এবং সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জাতির সংহতি ও সুশাসনের ভিত্তি স্থাপন করে।
সার্বিকভাবে, ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা দেশের সংবিধানকে একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে সাহায্য করে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি জাতির জন্য একটি পবিত্র প্রতিজ্ঞা ও আদর্শের প্রতীক যা স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত.
ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় পক্ষের মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: ভারতীয় পার্লামেন্ট হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, যার দুটি কক্ষ হলো নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। এই দুই কক্ষের মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক বেশ সমন্বিত এবং নির্দিষ্ট ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত।
সাংবিধানিক কাঠামো ও সম্পর্ক
পার্লামেন্টের গঠন: ভারতীয় পার্লামেন্ট তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত—রাষ্ট্রপতি, লোকসভা (নিম্নকক্ষ), এবং রাজ্যসভা (উচ্চকক্ষ)। সংসদীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী এই তিনটি অংশ সমভাবে এবং নির্ধারিত ক্ষমতার অধীনে কাজ করে।
ক্ষমতার সমতা ও পার্থক্য:
সাধারণ আইন প্রণয়নে (অর্থবিল বাদে) উভয় কক্ষের সমান ক্ষমতা রয়েছে।
সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবে উভয় কক্ষের সম্মতি বাধ্যতামূলক।
রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন, উচ্চ আদালত ও নির্বাচন কমিশন প্রভৃতির সদস্য নির্বাচনে উভয় কক্ষের সমান অংশগ্রহণ।
অর্থবিল ক্ষেত্রে লোকসভা অধিক ক্ষমতাশালী; রাজ্যসভা অর্থবিল সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না এবং ১৪ দিনের বেশি আটকে রাখতে পারে না।
লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে বিল নিয়ে মতবিরোধ হলে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন, যেখানে সাধারণত লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তার সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পায়।
অবস্থানগত ও স্থায়িত্বের পার্থক্য:
রাজ্যসভা একটি স্থায়ী কক্ষ; এর মেয়াদ ৬ বছর, প্রতি দুই বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য পরিমাণ অবসর গ্রহণ করে।
লোকসভা পাঁচ বছরের মেয়াদী এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভঙ্গ করা যেতে পারে।
সাংগঠনিক এবং প্রক্রিয়াগত সমন্বয়:
সংসদে আইন প্রণয়নের জন্য উভয় কক্ষের সমন্বিত কার্যক্রম অপরিহার্য।
যেকোনো বিল আইনে পরিণত হতে উভয় কক্ষের পাস করা এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন।
সারমর্মে
লোকসভা ও রাজ্যসভা দুটোই ভারতের পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যাদের মধ্যে ক্ষমতার সমতা ও পার্থক্য বিদ্যমান। এর মাধ্যমে ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা কার্যকর হয়, যেখানে জনমত ও প্রতিনিধিত্বের ভার নিম্নকক্ষে (লোকসভা) বেশি থাকলেও রাজ্যসভার মাধ্যমে রাজ্য গুলোর স্বার্থ রক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা একটি ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দ্বিকক্ষ ব্যবস্থা ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে মজবুত করে এবং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
এই সম্পর্কের মাধ্যমে দেশীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
রাজ্যসভার গঠন ক্ষমতা এবং কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: রাজ্যসভা হল ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ এবং এটি একটি স্থায়ী আইনসভা। এর গঠন এবং কার্যাবলী নিম্নরূপ:
গঠন ক্ষমতা:
রাজ্যসভার সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা ২৫০ জন হতে পারে।
এর মধ্যে ২৩৮ জন সদস্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা দ্বারা নির্বাচিত হন।
১২ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন যারা শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান বা সমাজসেবা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
সদস্যদের মেয়াদ ৬ বছর হয়, প্রতি দুই বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি; ডেপুটি চেয়ারম্যান সদস্যদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন।
কার্যাবলী ও ক্ষমতা:
আইন প্রণয়ন: রাজ্যসভা কেন্দ্র ও রাজ্যের বিষয়াদি নিয়ে আইন প্রণয়ন করে। সাধারণ বিলের ক্ষেত্রে লোকসভা ও রাজ্যসভা সমান ক্ষমতা ভোগ করে, তবে অর্থবিল পাসে রাজ্যসভার ক্ষমতা কম।
শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ: রাজ্যসভা সরকারকে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন বাজেট সমালোচনা, নিন্দাসূচক প্রস্তাব, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব ইত্যাদি।
নির্বাচন ও অপসারণ: গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়োগ ও অপসারণে রাজ্যসভা সুপারিশ করতে পারে, যেমন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।
সংবিধান সংশোধন: রাজ্যসভা সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে লোকসভার সমান ভূমিকা পালন করে।
জরুরি অবস্থার অনুমোদন: রাষ্ট্রপতি যে কোন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে রাজ্যসভার অনুমোদন প্রয়োজন।
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা: কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভা বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতাও ভোগ করে।
অন্যান্য: নতুন রাজ্য গঠন, রাজ্যের নাম বা সীমানার পরিবর্তন, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণের অন্তর্ভুক্ত কাজ রাজ্যসভার কার্যাবলীর অংশ।
রাজ্যসভা মোটা দাগে একটি ধারাবাহিক, স্থায়ী ও ভারসাম্যপূর্ণ উর্দ্ধ কক্ষ হিসেবে কাজ করে, যা রাজ্যসমূহের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও সংসদের কার্যক্রমে গুরুত্বসহকারে ভূমিকা পালন করে। এটি সংসদের অন্যান্য কক্ষের তুলনায় বিলুপ্তির বিষয় নয় এবং দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এভাবে রাজ্যসভা ভারতের সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর গঠন ও কার্যাবলী দেশের কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ভারতীয় লোকসভার অধ্যক্ষের বা স্পিকারের ক্ষমতা এবং তার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় লোকসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকার হলেন লোকসভার সভার প্রধান এবং তার কার্যাবলী ও ক্ষমতা অত্যন্ত ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ নির্বাচনের পর লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সদস্যদের মধ্যে থেকে পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন স্পিকার। তাকে নিরপেক্ষ ও বিচারবুদ্ধিমূলকভাবে কাজ করতে হয় এবং লোকসভার নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা রক্ষা তাঁর প্রধান দায়িত্ব।
স্পিকারের প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপ:
লোকসভার অধিবেশন পরিচালনা: স্পিকার সভায় আলোচনার নিয়ন্ত্রণ করেন, কোন প্রস্তাব আলোচনা হবে তা নির্ধারণ করেন এবং সভার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করান।
শৃঙ্খলা রক্ষা: অধিবেশনে সালাসাল অবাধ্যতা বা রীতিভঙ্গ হলে স্পিকার তার মাধ্যমে দমন করেন, অভিযুক্ত সদস্যকে স্থগিত বা বহিষ্কারের আদেশ দিতে পারেন।
অর্থবিলের প্রকার নির্ধারণ: কোন বিল অর্থবিল কিনা তা স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। অর্থ বিল কেবল লোকসভাতেই পেশ করা যায়।
সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণ: স্পিকার সদস্যদের বক্তব্য ও অধিকার রক্ষা করেন এবং অপরিসীম স্বাধীনতা প্রদান করেন, যেমন স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার।
সংবিধান ও নিয়মের রক্ষক: সংসদের কার্যপদ্ধতি ও সংসদীয় বিধিবিধান রক্ষা এবং প্রয়োগ স্পিকারের দায়িত্ব।
সংসদীয় কমিটির প্রধান: স্পিকার সংসদের বিভিন্ন কমিটির প্রধান হন এবং কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন।
লোকসভা ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগকারী: রাষ্ট্রপতির বাণী ও বার্তা লোকসভায় প্রেরণ ও বিভিন্ন খবর রাষ্ট্রপতিকে জানানো স্পিকারের মাধ্যমে হয়।
বিরোধ নিষ্পত্তি: স্পিকার বিতর্কের সময় সদস্যদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ করেন এবং বক্তব্যের সময় ও ক্রম নির্ধারণ করেন।
সদস্যপদের অযোগ্যতা নির্ধারণ: সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা স্পিকারের হাতে রয়েছে।
যৌথ অধিবেশন পরিচালনা: লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশন স্পিকার পরিচালনা করেন।
স্পিকারের এসব ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভারতীয় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। তিনি লোকসভা সভার চলমান কার্যক্রমের নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় দিকের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন। স্পিকারকে সংসদের নিরপেক্ষতা ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কার্যাবলী এবং তার পথ মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, কার্যাবলী এবং পদমর্যাদার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে দেওয়া হলো:
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
ভারতের রাষ্ট্রপতি দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শীর্ষ সাংবিধানিক ব্যক্তি এবং দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান হলেও বাস্তবে নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী হয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী প্রধানত নিম্নরূপ:
১. কার্যনির্বাহী ক্ষমতা
সংবিধানের সব কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীকে এবং মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ ও তাদের পোর্টফোলিও বণ্টন করেন।
রাজ্যের রাজ্যপাল, সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, নির্বাচনী কমিশনার ইত্যাদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন।
ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। যুদ্ধ ঘোষণা ও শান্তি ঘোষণা করতে পারেন।
২. আইন প্রণয়নের ক্ষমতা
সংসদে বিল পেশ ও পাশের জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন।
আইন বাতিল বা অনুমোদনের ক্ষমতা রয়েছে।
জরুরি অবস্থার প্রবর্তন ও মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারেন।
৩. বিচারিক ক্ষমতা
দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষমা, দণ্ড হ্রাস বা স্থগিত করার ক্ষমতা রয়েছে, বিশেষত মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে।
৪. কূটনৈতিক ক্ষমতা
আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি রাষ্ট্রপতির নামে স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়।
৫. জরুরি ক্ষমতা
রাষ্ট্রীয় সংকট বা জরুরি পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, যেমন রাষ্ট্রপতি শাসন আরোপ ইত্যাদি।
রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা
রাষ্ট্রপতি ভারতের "প্রথম নাগরিক" এবং দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রতীক।
সংবিধানে রাষ্ট্রপতির অবস্থান সর্বোচ্চ, এবং তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।
ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কের ভূমিকাও পালন করেন।
দেশজুড়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বাস করেন এবং এছাড়া তিনটি রিট্রিট ভবন রয়েছে তার অবসর যাপনের জন্য।
ভারতের সংবিধান ও ৪২তম ও ৪৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবেও কাজ করতে পারেন।
সংক্ষেপে
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি পরিচিত একজন নামমাত্র নির্বাহী প্রধান হিসেবে যিনি সাংবিধানিক সীমার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শকে সম্মান করে সংবিধান ও দেশীয় শাসন ব্যবস্থার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর ক্ষমতা নির্বাহী, আইন প্রণয়ন, বিচারিক, কূটনৈতিক ও জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাপক হলেও বাস্তব প্রয়োগ মন্ত্রিপরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। ভারতীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ এবং তিনি দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক ছিলেন।
এই তথ্যগুলো থেকে স্পষ্ট যে, ভারতীয় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক হলেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন সংবিধান ও গণতান্ত্রিক নিয়মের আলোকে.
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং তার পদমর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, কার্যাবলী এবং পদমর্যাদা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান এবং প্রকৃত নির্বাহী কর্তৃত্ব (ডি ফ্যাক্টো এক্সিকিউটিভ)। যদিও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নামমাত্র নির্বাহী ক্ষমতা রাখেন (ডি জুর এক্সিকিউটিভ), বাস্তবে কর্মব্যবস্থার প্রধান ও প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রীই হন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৫ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করেন, তবে সাধারণত লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকে এই পদে মনোনীত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সংসদের (লোকসভা বা রাজ্যসভা) সদস্য হতে হবে, যদি না হন তাহলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে সংসদের সদস্য হতে হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল সাধারণত ৫ বছর, তবে লোকসভা ভাঙ্গা হলে সেটা কমতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রাখেন। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী মনোনয়ন, তাদের দপ্তর বন্টন, আবার কোনো মন্ত্রীর পদত্যাগ বা দূর্বল অবস্থায় তাদের পদত্যাগ করানোর ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যাবলী
প্রধানমন্ত্রী সরকার ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানানো এবং সংসদে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব।
রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে দলীয় ঐক্য রক্ষা এবং নির্বাচনী পদক্ষেপ রূপরেখা করা।
বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা ও বিভিন্ন দেশের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করা।
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান এবং সরকারের নীতি প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়া।
পরিকল্পনা কমিশন বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রকমের কমিশনের চেয়ারম্যান থাকা।
সরকারের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন।
প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা
ভারতের প্রটোকলের পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পরেই থাকেন, অর্থাৎ তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী।
ভারতের পদমর্যাদার ক্রমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের পরেই দেখা যায়।
কিছু মত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ভারতের একক ক্ষমতার অধিকারী হলেও অন্যদের মতে তিনি রাষ্ট্রপতির পরবর্তী কর্মচারী, তবে সংবিধানের সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে রাষ্ট্রপতির সমতুল্য বলা হয়েছে।
বাস্তবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রকৃত শাসক এবং সরকারের মুখ।
সারসংক্ষেপ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দেশের সরকার প্রধান, মন্ত্রিসভার নেতা এবং রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা। তিনিই প্রকৃতভাবে সরকারের নেতৃত্ব দেন ও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সংবিধান ও রাজনীতির বাস্তবে রাষ্ট্রপতি নামমাত্র প্রধান হলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং কার্যাবলী অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ব্যাপক। পদমর্যাদায় তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হন।
এই তথ্যগুলো ভারতীয় সংবিধান, সংসদীয় প্রথা এবং বিভিন্ন সমসাময়িক রাজনীতি বিশ্লেষণ থেকে সংগৃহীত.
ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদের নেতা এবং রাজ্যের প্রকৃত শাসনদাতা হিসেবেই কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে প্রধান কিছু দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা
মন্ত্রীপরিষদের নেতৃত্ব: রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদ গঠন ও তার নেতৃত্বদান তাঁর হাতে থাকে। মন্ত্রীরা তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যপাল দ্বারা নিয়োগ পায়।
বিধানসভায় নেতা: তিনি রাজ্য বিধানসভার নেতা হিসেবে কাজ করেন এবং বিধানসভা অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত ও প্রয়োজনে ভেঙেও দিতে পারেন।
রাজ্যপালের প্রধান উপদেষ্টা: সংবিধানের ১৬৩ ধারায় বলা হয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রধান উপদেষ্ট। তিনি রাজ্য প্রশাসনের কার্যক্রম পরিচালনার সময় রাজ্যপালকে পরামর্শ দেন ও সহযোগিতা করেন।
নিয়োগ ও অপসারণ ক্ষমতা: সংবিধানের ১৬৪(১) ধারায় বলা হয়েছে যে রাজ্যপাল যেই ব্যক্তিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন তাকে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে রাজ্যপালের আদেশ বাস্তবে প্রধানত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিপরিষদের নেতৃত্ব নেন। রাজ্যপালের কাছে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বশীল থাকেন এবং রাজ্যপাল দ্বারা অপসারণ করা যেতে পারে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিধানসভার দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।
কোয়ালিশন সরকারে সীমিত ক্ষমতা: যখন রাজ্যের সরকার কোয়ালিশন ভিত্তিতে হয়, তখন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা কিছুটা সীমাবদ্ধ হয় কারণ তাকে বিভিন্ন দল ও অংশীদারদের সাথে সমঝোতা করতে হয়।
পদমর্যাদা
মুখ্যমন্ত্রীর মর্যাদা মূলত তার দলের মধ্যে সমর্থন, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং রাজ্যপালের সাথে সুসম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।
যদি মুখ্যমন্ত্রী নিজ দলের অভ্যন্তরে দৃঢ় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এবং রাজ্যপালের সাথে সমন্বয় রক্ষা করতে পারেন, তবে তার ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বেড়ে যায়।
একই দলের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সহযোগিতা স্থায়ী হয়, যা মুখ্যমন্ত্রীর কর্মক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের মধ্যে পার্টি ভিন্ন হলে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, যা মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং মর্যাদা কমিয়ে দেয়।
কার্যকাল
সাধারণত মুখ্যমন্ত্রীর মেয়াদ পাঁচ বছর, তবে বিধানসভার আস্থা যদি থাকে তবে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারেন।
তিনি পদত্যাগ করতে পারেন, অপসারিত হতে পারেন বা মৃত্যুবরণ করতে পারেন।
সংক্ষেপে, ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রকৃত শাসক এবং মন্ত্রীপরিষদের নেতা হিসেবেই ব্যাপক কার্যকর্তৃত্ব ও গৌরবপূর্ণ পদমর্যাদা ভোগ করেন। যদিও সংবিধানে কিছু বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষমতা অনেকটাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের অভ্যন্তরীণ সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। যদি মুখ্যমন্ত্রী তার দলের মধ্যে শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজ্যপালের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি তার ক্ষমতা এবং মর্যাদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন।
এভাবেই ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সমাজ ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের গঠন এবং তার কার্যাবলী সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের গঠন এবং তার কার্যাবলী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে দেওয়া হলো:
গঠন:
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একজন প্রধান বিচারপতি এবং সর্বোচ্চ ৩১ জন বিচারপতি থাকতে পারেন।
বিচারপতিদের নিয়োগ রাষ্ট্রপতি করেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ এবং অন্যান্য বিধিমালা অনুসরণে।
বিচারপতি হতে হলে একজন ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং তাকে অন্তত পাঁচ বছর কোনো হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে বা দশ বছর আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বিচারপতিরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণযোগ্য।
কার্যাবলী:
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কার্যাবলী প্রধানত চারটি প্রধান ক্ষেত্রের মধ্যে বিভক্ত:
মূল এলাকাসমূহ (Original Jurisdiction):
কেন্দ্র এবং এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করা।
রাজ্যগুলো এবং কেন্দ্রের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি করা।
আপিল এলাকা (Appellate Jurisdiction):
উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিল শুনানী।
দেওয়ানী, ফৌজদারি, সংবিধান ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ।
পরামর্শদান এলাকা (Advisory Jurisdiction):
রাষ্ট্রপতি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা আইন সম্পর্কিত প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ বাধ্যতামূলক নয়।
আদেশ, নির্দেশ ও হস্তক্ষেপ (Writ Jurisdiction and Suo Moto Power):
মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আদেশ ও নির্দেশ জারি করা।
সংবিধান অনুযায়ী বন্দি প্রত্যক্ষী পরমাদেশ (হাবিয়াস কোরপাস) ইস্যু করা।
নিজের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করা (সুয়ো মোটো)।
সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের সকল আদালত এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। এর মাধ্যমে এটি ভারতের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে। সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতাও রয়েছে, যার মাধ্যমে এটি সরকারি আইন এবং কার্যক্রম সংবিধানের বিরুদ্ধে হলে তা বাতিল করতে পারে।
সংক্ষেপে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আদালত, যার গঠন এবং কার্যাবলী সংবিধান অনুযায়ী স্থির এবং যার মূল ভুমিকা হলো সংবিধানের রক্ষণা ও বিতর্ক সমাধান, দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করা।
ভারতীয় হাইকোর্টের গঠন ক্ষমতা এবং তার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় হাইকোর্টের গঠন ক্ষমতা এবং কার্যাবলী সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
গঠন ক্ষমতা (Composition):
প্রতিটি হাইকোর্টের একটি প্রধান বিচারপতি (Chief Justice) এবং অন্যান্য নিয়মিত বিচারক (Judges) থাকেন, যাঁদের সংখ্যা রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন।
বিচারকরা রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন, সেই সাথে প্রধান বিচারপতি ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গভর্নরের পরামর্শ নেয়া হয়।
বিচারকদের অবসরসীমা বয়স ৬২ বছর।
অতিরিক্ত বিচারক এবং কার্যরত বিচারক নিয়মিত বিচারকের অনুপস্থিতিতে বা অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর জন্য নিয়মিতভাবে নিযুক্ত হতে পারেন, তবে তাঁদেরও অবসরসীমা ৬২ বছর।
কার্যাবলী ও ক্ষমতা (Functions and Powers):
হাইকোর্ট হলো সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত, যা মূলত আপিল, মূল, এবং সংবিধানগত বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষমতা রাখে।
মূল ক্ষমতা: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের নাগরিক ও ফৌজদারি মামলার প্রাথমিক বিচার। কিছু হাইকোর্ট যেমন কলকাতা, বেঙ্গালুরু, এবং মোম্বাই হাইকোর্টের নিজস্ব মূল ক্ষমতা রয়েছে।
আপিল ক্ষমতা: নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি করা। সিভিল এবং ফৌজদারি ক্ষেত্রে উভয়ই।
হাইকোর্টের রাইট ক্ষমতা: সংবিধান অনুসারে মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য হাইকোর্ট হাবিয়াস কর্পাস, ম্যান্ডামাস, প্রিহিবিশন, কো ওয়ারেন্টো, এবং সার্টিওরারি মতো রাইট ইস্যু করার অধিকার রাখে।
তত্ত্বাবধান ক্ষমতা: হাইকোর্টের অধীনে থাকা নিম্ন আদালতসমূহ ও অন্যান্য বিচারিক সংস্থার কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে রাখা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।
সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিচারিক পর্যালোচনা (Judicial Review) করতে পারে। অর্থাৎ, কোনো আইন বা সরকারি আদেশ সংবিধান বিরূপ হলে তা বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে।
হাইকোর্ট কোর্ট অফ রেকর্ড, অর্থাৎ আদালতের রায় ও আদেশ সংরক্ষণ করে এবং তা ভবিষ্যতে প্রাসঙ্গিক মামলা সমাধানে প্রিসিডেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আদালতের সম্মান রক্ষায় বাতিলাদেশের ক্ষমতা (Contempt of Court) রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ক্ষমতাও রয়েছে, যেমন নিম্ন আদালতের কর্মচারী নিয়োগ, মামলা স্থানান্তর, এবং আদালতের নিয়ম-কানুন প্রণয়ন।
সার্বিকভাবে, ভারতীয় হাইকোর্ট রাজ্য পর্যায়ে সংবিধানগত রক্ষক হিসেবে কাজ করে এবং দেশের বিচারিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
লোকসভার অধ্যক্ষ 22 স্পিকার সম্বন্ধে লেখ।
উত্তর: ভারতের লোকসভার ২২ তম স্পিকার হলেন ওম বিড়লা। তিনি রাজস্থানের কোটা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত একজন বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য। ওম বিড়লা প্রথমবার ২০১৯ সালে ১৭ তম লোকসভায় স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর পুনরায় ২২ তম লোকসভার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। এই ভাবে তিনি স্পিকার পদে ধারাবাহিকভাবে দুইবার নির্বাচিত হওয়া ভারতের প্রথম এমন নেতা, যিনি বিগত দুই দশকে এই গৌরব অর্জন করেছেন।
স্পিকার হিসেবে ওম বিড়লার দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে লোকসভা অধিবেশনে পরিচালনা করা, বিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা, হাউসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ আদেশ গ্রহণ করা, যেমন কোন বিল মানি বিল কিনা তা নির্ধারণ করা। এছাড়াও স্পিকার লোকসভা অধিবেশনের সম্মেলনে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে গণ্য হন এবং সংসদের যৌথ অধিবেশনের সভাপতিও স্পিকার করেণ।
ওম বিড়লার রাজনৈতিক জীবনে রাজস্থানের বিধানসভায় সদস্য হিসেবে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন এবং ২০১৪ সাল থেকে কোটা লোকসভা আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ধরে লোকসভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশ হয়েছে এবং তিনি সংসদের কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন.
রাজ্যসভর কার্যাবলী সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: রাজ্যসভা হল ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ, যা একটি স্থায়ী আইনসভা হিসেবে কাজ করে। এর সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন, যাদের মধ্যে ২৩৮ জন নির্বাচনপ্রাপ্ত সদস্য এবং ১২ জন মনোনীত সদস্য (যাদের রাষ্ট্রপতি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সমাজসেবার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মনোনীত করে থাকেন)। রাজ্যসভা সদস্যদের কার্যকাল ৬ বছর, এবং প্রতি দুই বছরে একজনের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন।
রাজ্যসভার প্রধান কার্যাবলী হলো:
আইন প্রণয়ন: রাজ্যসভা কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়ের পাশাপাশি রাজ্য ও যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ের আইন প্রণয়ন করতে পারে। সাধারণ আইন প্রণয়নে রাজ্যসভা ও লোকসভা সমান ক্ষমতা রাখলেও অর্থ সম্পর্কিত বিল প্রণয়নে রাজ্যসভার ক্ষমতা কম থাকে।
শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ: বাজেট ও প্রস্তাবগুলোর সমালোচনা, নিন্দাসূচক প্রস্তাব ইত্যাদির মাধ্যমে রাজ্যসভা শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে।
নির্বাচন ও অপসারণ ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার সহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নিয়োগ ও অপসারণে রাজ্যসভা সুপারিশ করতে পারে।
সংবিধান সংশোধন: সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রাজ্যসভা ও লোকসভা উভয়ের অনুমতিতে গ্রহণ হয়।
জরুরি অবস্থার অনুমোদন: রাষ্ট্রপতি ঘোষিত জরুরি অবস্থার জন্য রাজ্যসভার অনুমোদন প্রয়োজন।
বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যসভা আইনসভায় বিধি ভঙ্গকারীদের শাস্তি প্রদান ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন বা ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
অন্যান্য ক্ষমতা: নতুন রাজ্য গঠন, রাজ্যের নাম ও সীমানা পরিবর্তন এবং সর্বভারতীয় চাকরি ও নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি, আর ডেপুটি চেয়ারম্যান সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন। রাজ্যসভা সাধারণত লোকসভার সমান মর্যাদার হলেও, অর্থবিষয়ক ও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে লোকসভা অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন।
সুতরাং, রাজ্যসভা ভারতের আইন প্রণয়ন ও শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক ও পরামর্শমুলক ভূমিকা পালন করে। এটি একটি চিরস্থায়ী এবং অধিকতর স্থায়ী সংসদীয় কক্ষ হিসেবে কাজ করে, যা দেশের রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে.
রাজ্যসভার গঠন সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: রাজ্যসভা হল ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ বা ঊর্ধ্বকক্ষ। রাজ্যসভার সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন। এই সদস্যদের মধ্যে একাংশ (২৩৮ জন) নির্বাচিত হন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর বিধানসভা সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিরুপেও ভোট প্রক্রিয়ায়, এবং বাকি ১২ জন সদস্যকে ভারতের রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন যারা বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, সমাজসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
রাজ্যসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ সাধারণত ছয় বছর, এবং প্রতি দুই বছর অন্তর সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ অবসর নিয়ে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এটি একটি চিরস্থায়ী কক্ষ যা কখনো বিলুপ্ত হতে পারে না, ফলে লোকসভার থেকে আলাদা। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচন ও মনোনয়নে নিয়মাবলী নির্ধারিত আছে।
রাজ্যসভার প্রধান অবতারণা হলো কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর নিবিড় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে ভারতে উপরাষ্ট্রপতি থাকেন এবং সদস্যদের মধ্য থেকে উপ-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জনসংখ্যার অনুপাতে বণ্টিত হয়, যেমন উত্তর প্রদেশের ৩১ আসন রয়েছে, মহারাষ্ট্রের ১৯, তামিলনাড়ুর ১৮, পশ্চিমবঙ্গের ১৬, বিহারের ১৬, ইত্যাদি। একটি স্থায়ী ও অধিকতর স্থায়ী সংসদীয় কাঠামো হিসেবেই রাজ্যসভা কাজ করে এবং এটি সংসদের দুই কক্ষের মধ্যে একটি প্রধান কক্ষ.
ভারতীয় পার্লামেন্ট বা কেন্দ্রীয় আইনসভার কমিটি ব্যবস্থার উপর একটি টীকা লেখ।
উত্তর: ভারতীয় পার্লামেন্ট বা কেন্দ্রীয় আইনসভায় কমিটি ব্যবস্থাটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেটি আইন প্রণয়ন, শাসন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং সরকারের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকে। এই কমিটিগুলি সংসদের কাজের বোঝা হ্রাসকরণ এবং সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও পর্যালোচনার জন্য গঠিত হয়।
ভারতীয় পার্লামেন্টের কমিটি দুই ধরনের হয় — স্থায়ী কমিটি (Standing Committees) এবং অস্থায়ী বা এড হক কমিটি (Ad Hoc Committees)।
স্থায়ী কমিটি (Standing Committees):
স্থায়ী কমিটি হলো রাজ্যসভা ও লোকসভার সদস্যদের দ্বারা প্রতিবার গঠিত স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যা বছরে পুনর্গঠিত হয়। এদের কাজ সংসদের কার্যাবলীকে সহজতর করা এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বাজেট এবং আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা। স্থায়ী কমিটিগুলো আবার কয়েকটি ধাপে বিভক্ত:
আর্থিক কমিটি: যেমন পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটি। এরা সরকারের আর্থ-সামাজিক ব্যয় এবং প্রকল্পগুলো তদারকি করে।
বিভাগীয় স্থায়ী কমিটি: মোট ২৪টি কমিটি আছে, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিষয়ভিত্তিক কাজ করে। প্রত্যেক কমিটিতে লোকসভা থেকে ২১ জন ও রাজ্যসভা থেকে ১০ জন সদস্য থাকেন।
অন্যান্য স্থায়ী কমিটি: যেমন সংসদের ব্যবসা সম্পর্কিত কমিটি, সদস্যদের অনুপস্থিতি কমিটি ইত্যাদি।
অস্থায়ী কমিটি (Ad Hoc Committees):
এই কমিটিগুলো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা সময়সীমার জন্য গঠিত হয় এবং কাজ শেষ হলে আবশ্যিকভাবে ভেঙে যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন, তদন্ত, বা নির্দিষ্ট কোনো বিলের উপর বিশেষ পর্যালোচনা করার জন্য গঠিত কমিটি।
কমিটির গুরুত্ব ও কার্যক্ষমতা:
কমিটিগুলো সংসদের বৈঠকগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়, যা ফ্লোরে সম্ভব হয় না।
এগুলো মাল্টিপার্টি সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়, যা দলীয় রাজনীতি থেকে কিছুটা মুক্ত আলোচনা ও সমঝোতার সুযোগ দেয়।
সরকারি বাজেট, প্রকল্প এবং আইন প্রণয়নের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ায়।
কমিটির রিপোর্ট সংসদে পেশ করা হয়, যা সরকারের ভিত্তিমূলক তদারকি হিসেবে কাজ করে।
চ্যালেঞ্জ:
অনেক সময় দায়িত্বপূর্ণ কমিটিতে সদস্যদের উপস্থিতি কম থাকে।
রাজনৈতিক দলভিত্তিক মতের দ্বন্দ্ব কমিটির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
কমিটির বাইরের গবেষণাশীল ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের অভাব থাকতে পারে।
তাদের সুপারিশ বাধ্যতামূলক নয়, ফলে প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা থাকে।
সম্পূর্ণভাবে, ভারতীয় পার্লামেন্টের কমিটি ব্যবস্থাটি সংসদের কার্যক্রমে গভীরতা এবং দক্ষতা আনার ক্ষেত্রে অপরিহার্য, যা যথাযথ পরিচালনায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পার্টিপার্টনির্ভরতা ও স্বচ্ছতার উন্নতি জরুরি।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হলেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারী। তাঁর প্রধান ক্ষমতা এবং কার্যাবলী নিম্নরূপ:
সাংবিধানিক অবস্থান:
উপরাষ্ট্রপতি ভারতের সংবিধানের আর্টিকেল 63 দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
তিনি রাষ্ট্রপতির পরেই দেশের দুই নম্বর সর্বোচ্চ পদে অবস্থান করেন এবং রাষ্ট্রপতীর অনুপস্থিতিতে বা পদত্যাগ, মৃত্যু বা অপসারণের কারণে যে কোনো সময় রাষ্ট্রপতির প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলান।
প্রধান কার্যভার:
তিনি রাজ্যসভার (ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ) রাষ্ট্রীয় চেয়ারম্যান (ex-officio Chairman) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে উনি সংসদের অধিবেশন পরিচালনা করেন, শৃঙ্খলা রক্ষা করেন এবং সংসদের নিয়মাবলী অনুসরণ নিশ্চিত করেন। এছাড়া ভোটের ক্ষেত্রে সমান পুলের হলে তিনি ভোট দিতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে কর্তব্য পালন:
রাষ্ট্রপতি কেউ পদত্যাগ করলে, মারা গেলে অথবা অপসারিত হলে, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত (সর্বোচ্চ ৬ মাস) তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি অসুস্থ, অনুপস্থিত অথবা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাজ সামলান যতদিন রাষ্ট্রপতি স্বাভাবিক অফিসে ফিরে আসেন।
এই সময়ে তিনি রাষ্ট্রপতির সমস্ত ক্ষমতা এবং সুবিধা ভোগ করেন, কিন্তু রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ত্যাগ করেন এবং সেই সময় রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন এবং মেয়াদ:
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ভারতে সংসদের দুটো কক্ষের সদস্যদের মাধ্যমে একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতিতে, যেখানে সাংসদরা প্রাধান্য অনুসারে ভোট দেন।
উপরাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর, তবে তিনি তার উত্তরসূরী দায়িত্ব গ্রহণ না করে অব্যাহত থাকতে পারেন এবং পুনঃনির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন।
অপসারণ ও পদত্যাগ:
রাজ্যসভার অধিকাংশ সদস্য এবং লোকসভার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা উপরাষ্ট্রপতি অপসারণ করা যেতে পারে, যা রাষ্ট্রপতির তুলনায় একটি সহজ প্রক্রিয়া।
তিনি নিজের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে পারেন।
সারসংক্ষেপে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতির প্রধান ভূমিকা হল রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে বা শূন্য পদে দায়িত্ব পালন এবং রাজ্যসভার মূল চেয়ারম্যান হিসেবে সংসদের কার্যকলাপ পরিচালনা করা। তাঁর ক্ষমতা এবং দায়িত্ব রাজনীতিক ও বিধানমূলক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও সুসংহতভাবে নির্ধারিত রয়েছে।
ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের (Governor) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বা discretionary powers হলো এমন ক্ষমতা যা তিনি কাউন্সিল অব মিনিস্ট্রসের পরামর্শ ছাড়াই স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্ষমতা ভারতের সংবিধানে উল্লেখিত এবং রাজ্য সরকারের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার প্রধান দিকগুলো নিম্নরূপ:
সংবিধানগত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা (Constitutional Discretion):
কোনো বিল প্রেসিডেন্টের সম্মতিতে পাঠানোর জন্য বিল সংরক্ষণ করার ক্ষমতা।
রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন (President's Rule) প্রস্তাব দেওয়া এবং তার জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়া।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা হলে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া।
নির্দিষ্ট আঞ্চলিক বা উপজাতীয় বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশাসনিক ও আইনি বিষয়ে তথ্য চাওয়া।
পরিস্থিতিগত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা (Situational Discretion):
নির্বাচনে কোন দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে নতুন মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করা।
রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়া বা বাদ দেওয়া পার্লামেন্টের সদস্যদের সমর্থন হারালে মন্ত্রিসভার বরখাস্ত করা।
মন্ত্রিসভার উপর আস্থা আছে কিনা তা যাচাই করা বা বিশ্বাস হারালে পদত্যাগ বা বরখাস্তের সুপারিশ করা।
বিশেষ আঞ্চলিক উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করা।
আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।
স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ব্যবহার রাজ্যপালকে রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ক্ষমতাগুলো ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংবিধানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই ক্ষমতার যথার্থ ব্যবহার ও সীমাবদ্ধতার ওপর সুপ্রিম কোর্ট ও কমিশনসমূহ গুরুত্বারোপ করেছে যাতে রাজনৈতিক স্বার্থে এর অপব্যবহার না হয়।
সারমর্মে, রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট এবং তা রাজ্যের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন—প্রেসিডেন্ট শাসনের সুপারিশ, বিল সংরক্ষণ, মুখ্যমন্ত্রী মনোনয়ন, বিধানসভা ভাঙ্গার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ইত্যাদি.
হাইকোর্টের গঠন সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: হাইকোর্ট হলো দেশের উচ্চ পর্যায়ের বিচার기관, যা সাধারণত রাজ্যের বা দেশের বিচারিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের নিম্ন বিভাগ হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগ কাজ করে, এবং এটি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত।
গঠন:
হাইকোর্টে একজন প্রধান বিচারপতি থাকেন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্যান্য নিয়মিত বা স্থায়ী বিচারপতিরাও থাকেন।
বিচারপতির সংখ্যা সংবিধানে নির্দিষ্ট করা নেই, বরং রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ করেন।
অতিরিক্ত ও অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগের নিয়মও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় থাকে।
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হাইকোর্ট বিভাগে ১০১ জন বিচারপতি কর্মরত আছেন, যাদের মধ্যে ৭৬ জন স্থায়ী এবং ২৫ জন অতিরিক্ত বিচারপতি। একাধিক বেঞ্চে তারা বিচার কার্য পরিচালনা করেন।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের জন্য কিছু যোগ্যতা নির্ধারিত আছে, যেমন: দেশের নাগরিক হওয়া এবং যথাযথ বিচারবিভাগীয় অভিজ্ঞতা থাকা ইত্যাদি।
হাইকোর্ট নির্দিষ্ট ভূগোলিক এলাকা বা জুড়িসডিকশনের মধ্যে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ক্ষেত্রে কাজ করে এবং সংবিধানের অধীনে নির্দিষ্ট এখতিয়ার ও ক্ষমতা লাভ করে থাকে।
সংক্ষেপে, হাইকোর্ট প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ আদালত যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ভারতের সংবিধানে অভিভাবক বা প্রধান হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় দেশের সংবিধানের প্রধান অভিভাবক বা গার্ডিয়ান। সংবিধানের সুরক্ষা, মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং সরকারের আইন ও আদেশের সংবিধান সম্মত ক্ষমতা যাচাই করার কাজ সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক বা প্রধান হিসাবে ভূমিকার মূল দিকসমূহ:
সংবিধানের রক্ষাকর্তা: সুপ্রিম কোর্ট হল ভারতের সংবিধানের সর্বোচ্চ ব্যাখ্যাকারক এবং রক্ষাকর্তা। এটি নিশ্চিত করে যে সরকার ও অন্যান্য সংস্থাগুলো সংবিধানের নীতিমালা এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে না। এর মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থা ও গণতন্ত্র রক্ষা পায়।
মৌলিক অধিকারগুলোর রক্ষক: আর্টিকেল ৩২ সূত্রে নাগরিকেরা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্ট যেকোনো আইন বা সরকারি আদেশ যা মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে কাজ করে তা বাতিল বা অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে।
বিচারিক পর্যায়ের সর্বোচ্চ আদালত: সুপ্রিম কোর্টের আপিল এবং পরামর্শমূলক ক্ষমতা রয়েছে। এটি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে এবং সংবিধানের মান বজায় রাখে।
ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা: আর্টিকেল ১৪১ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ এবং বাধ্যতামূলক। এছাড়া এটি আর্টিকেল ১৩ অনুযায়ী যেকোনো সংবিধান-বিরুদ্ধ আইনকে বাতিল করতে পারে।
ন্যায়বিচার সম্পূর্ণ করার ক্ষমতা: আর্টিকেল ১৪২ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট যে কোনো আদেশ বা নির্দেশনা দিতে সক্ষম, যা সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয়।
ন্যায্য শাসন ও বিচার ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা: বিভিন্ন মামলার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট সরকার ও নাগরিকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে, যাতে কেউ কোনো নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়ের শিকার না হয়।
সার্বিকভাবে, ভারতের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক বা প্রধান হিসাবে ভূমিকা হলো সংবিধানের সম্মান রক্ষা করা, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা এবং সরকারের আইন ও আদেশের সংবিধান অনুযায়ী হওয়া নিশ্চিত করা। এই ভূমিকার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট দেশের গণতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে রাখে।
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি একটি সাধারণ যুক্তরাষ্ট্র ব্যাবস্থার থেকে কিছু দিক দিয়ে ভিন্ন ও অনন্য। এটি একটি অভিনব ব্যবস্থা যা ভারতের বিশেষ প্রয়োজন পূরণের জন্য তৈরি হয়েছে। এর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
দুটি ধরণের সরকার: কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার, যারা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।
ক্ষমতার বণ্টন: কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা ও যুগ্ম তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করা হয়।
সংবিধানের প্রাধান্য: ভারতের সংবিধান সর্বোচ্চ আইন এবং এর ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হয়; এটি একটি লিখিত ও কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল পরিবর্তনযোগ্য সংবিধান।
কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতায় কেন্দ্রগভীর প্রবণতা দেখা যায়; গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং যুগ্ম তালিকার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যের আইনের চেয়ে প্রাধান্য পায়।
বিচারব্যবস্থা একক এবং কেন্দ্রীয়ভূত, অর্থাৎ রাজ্যের বিচারব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্টের অধীনস্থ।
ভারতের নাগরিকত্ব একক এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করে না।
রাজ্যগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতা কেন্দ্রীয় সংসদের নিয়ন্ত্রণাধীন, তাদের নামে, সীমানা পরিবর্তন সম্ভব।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে, যেখানে কেন্দ্র সরাসরি শাসন করে।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান।
এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য একত্রে ভারতকে একটি আধা-যুক্তরাষ্ট্র বা এককেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করতে সাহায্য করে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন অত্যন্ত বিস্তারিত এবং সংবিধান সংক্রান্ত দিক থেকে সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয়তার মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো সামান্য ভিন্ন এবং এটি কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ yet কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো প্রদর্শন করে।
সংক্ষেপে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি হল এককেন্দ্রিক, লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে দুই ধরণের সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি, যেখানে কেন্দ্রের প্রবণতা তীব্র, এবং বিচারব্যবস্থা ও নাগরিকত্ব একক। এই ব্যবস্থা ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য একটি অভিনব সমাধান.
ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন সংক্রান্ত সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতের সংবিধানের অধীনে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে আইন সংক্রান্ত সম্পর্ক অত্যন্ত বিস্তৃত এবং সূক্ষ্ম। এটি ভারতের ফেডারেল কাঠামোর মূল ভিত্তি এবং দেশীয় একতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আইনী দৃষ্টিকোণ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক প্রধানত সংবিধানের ২৪৫ থেকে ২৫৫ নম্বর আর্টিকেল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা পার্ট-এক্সআই-র আওতায় পড়ে।
আইন সংক্রান্ত সম্পর্কের মূল দিকসমূহ:
আইনী কার্যক্রমের ভৌগোলিক সীমা (Articles 245):
কেন্দ্র (সংসদ) ভারতের সর্বত্র আইন প্রণয়ন করতে পারে, অর্থাৎ দেশের সমস্ত রাজ্য ও ইউনিয়ন এলাকায়।
রাজ্য সংসদ কেবল তাদের নিজ নিজ রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম। রাজ্যের আইন সাধারণত কেবল সেই রাজ্যের ভূ-প্রদেশে প্রযোজ্য হয়।
আইনী বিষয়ের বিভাজন (Articles 246 ও 254):
সংবিধান ৭ম সূচিকায় তিনটি তালিকা দেয়:
ইউনিয়ন লিস্ট: শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য।
স্টেট লিস্ট: প্রধানত রাজ্য সংসদের জন্য।
কনকারেন্ট লিস্ট: কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের জন্য যৌথ আইন প্রণয়নের সুযোগ।
কনফ্লিক্টে কেন্দ্রীয় আইন প্রাধান্য পায়।
কেন্দ্রের অগ্রাধিকার ও নিয়ন্ত্রণ:
কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্য লিস্টের বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে (যেমন জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতে)।
রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে রাজ্য সংসদের বিলকে আটকে দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে রয়েছে।
রাজ্য আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ:
রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থায় রাজ্য আইন বাতিল বা স্থগিত করতে পারেন।
এর ফলে, কেন্দ্রীয় সংবিধান বিশেষত রাজ্য Legislature-কে আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রেখে দেশের একতা রক্ষা করে।
একক বিচার ব্যবস্থার উপস্থিতি:
কেন্দ্র ও রাজ্যের আইন কার্যকর করার জন্য একটি সমন্বিত বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, যা আইনের সমতা ও সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে।
সারসংক্ষেপে
ভারতের সংবিধান কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে আইন সংক্রান্ত সম্পর্ক কঠিন কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ। এতে রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি কেন্দ্রের কর্তৃত্ব ও দেশের একত্রিত স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। কেন্দ্রের আইন অনেক বেশি ক্ষমতাধর হলেও রাজ্যগুলো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের জন্য নিজস্ব আইন প্রণয়নের অধিকার রাখে, যা দেশীয় একতা ও বহুমাত্রিকতার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে।
এভাবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের আইনসংক্রান্ত সম্পর্ক ভারতের ফেডারেল কাঠামোর মর্মবিষয় এবং সাংবিধানিক পূর্ণতা নিশ্চিত করে।
কেন্দ্র রাজ্য শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার বন্টন এবং সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর: কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার বণ্টন এবং তাদের সম্পর্ক ভারতের সংবিধানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যা একটি বিশেষ ফেডারেল কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন এবং সম্পর্কের প্রধান দিকগুলো আলোচনা করা হলো:
১. ক্ষমতার বণ্টন
ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা তিনভাগে ভাগ করে দেয়:
ইউনিয়ন তালিকা (Union List): এখানে থাকা বিষয়গুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়া আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে। যেমন প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, মুদ্রা, ইত্যাদি।
রাজ্য তালিকা (State List): এখানে থাকা বিষয়গুলিতে রাজ্য সরকারদের একচেটিয়া আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। যেমন শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, স্থানীয় শাসন, ইত্যাদি।
সমবায় তালিকা (Concurrent List): এখানে থাকা বিষয়গুলিতে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে, তবে কেন্দ্রীয় আইন রাজ্যের আইনের উপর অগ্রাধিকার পায় যদি দ্বন্দ্ব হয়।
২. শাসন সংক্রান্ত সম্পর্কের প্রকার
আইনি সম্পর্ক: সংবিধানের ধারা ২৪৫ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতার বণ্টন এবং সীমাবদ্ধতা সুনির্দিষ্ট করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার কিছু ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে রাজ্য তালিকার বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে যেমন জাতীয় জরুরি অবস্থা, রাষ্ট্রপতির শাসন আমল ইত্যাদি।
প্রশাসনিক সম্পর্ক: কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিতে রাজ্যপাল নিয়োগ করে, যিনি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। কেন্দ্র রাজ্যের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতে পারে বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন রাজ্যের প্রশাসন চালাতে অক্ষম হলে।
আর্থিক সম্পর্ক: কর আদায় ও বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিক্যের ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্র কর রাজস্ব আরোহণ করে এবং অর্থের একটি অংশ রাজ্যে প্রদান করে। পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) ব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য মিলিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।
৩. সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য
ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার সমন্বয় এবং সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেয়। তাই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন।
কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলোর ক্ষমতার মধ্যে নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকলেও কখনো কখনো রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে মতবিরোধ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে যখন তারা রাজনৈতিক ভিন্ন দলে নিয়ন্ত্রিত থাকে।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য কর্তৃত্ব থাকলেও, রাজ্য স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রেও অধিকার রয়েছে এবং আইনি ও আর্থিক সম্পর্কের মাধ্যমে দুই স্তরের সরকারের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।
সংক্ষেপে
ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার বণ্টন একটি তিন তালিকার পদ্ধতির মাধ্যমে সুনিয়ন্ত্রিত; যেখানে কেন্দ্রের একচেটিয়া, রাজ্যের একচেটিয়া, এবং সমবায় বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। তাদের সম্পর্ক আইনি, প্রশাসনিক ও আর্থিক দিক থেকে সুসংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রিত হলেও বাস্তবে কিছু জটিলতা ও চ্যালেঞ্জও থাকে। কেন্দ্র ও রাজ্যের কার্যকর সমন্বয়, সহযোগিতা ও সংবিধানিক নির্দেশনার মাধ্যমে ভারতের একত্রিত ও কার্যকরী শাসন ব্যবস্থা বজায় থাকে।
এই বণ্টন এবং সম্পর্কের বিশদ আলোচনার জন্য সংবিধান এবং সরকারি নথি সূত্রে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তা এবং অসুবিধা বাধা বা চ্যালেঞ্জগুলি আলোচনা কর।
উত্তর: বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization) হলো প্রশাসন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় থেকে নীচের পর্যায়ে বা বিভিন্ন অংশে বিতরণ করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে ক্ষমতা বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বা স্থানীয় পর্যায়ে স্থানান্তরিত হয়। বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা এবং প্রয়োজনীয়তা পাশাপাশি এর অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলি নিচে আলোচনা করা হল:
বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা
দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ: স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয় এবং সিদ্ধান্ত কাঙ্খিত ফলাফল আনতে পারে।
স্থানীয় সমস্যার সমাধান: স্থানীয় মানুষের সমস্যা বুঝতে ও সমাধান করতে সক্ষম হয়, কারণ তারা তাদের পরিবেশ ও সমাজের ব্যাপারে ভালো অবগত।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নীহার থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দুর্নীতি কমাতে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করে।
সক্ষমতা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার: স্থানীয় সম্পদ ও ক্ষমতা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়, যা উন্নয়নের জন্য সহায়ক।
জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: স্থানীয় স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়, যা সমাজে গণতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়।
অঞ্চলীয় ভারসাম্য: বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে সহায়তা করে এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য কমায়।
বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধা, বাধা ও চ্যালেঞ্জ
ক্ষমতার অপব্যবহার: ক্ষমতা স্থানীয় পর্যায়ে গেলে তা অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে, যা দুর্নীতি ও ক্রীড়া সৃষ্টি করতে পারে।
সমন্বয়ের অভাব: কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে নীতি প্রয়োগে সমস্যা দেখা দেয়।
কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির অভাব: স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বা কৌশলগত দক্ষতার অভাব থাকতে পারে যা বড় দৃষ্টিভঙ্গির অভাব সৃষ্টি করে।
সম্পদের অভাব: অনেক সময় স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত আর্থিক ও মানবসম্পদ না থাকার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে বাঁধা পড়ে।
ক্ষমতার ধরণ ও সীমা: ক্ষমতা কতটুকু স্থানীয় পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে তার সঠিক নির্ধারণ কঠিন, যার ফলে দ্বন্দ্ব বা অস্পষ্টতা সৃষ্টি হতে পারে।
নৈতিকতা ও নেতৃত্বের সমস্যা: স্থানীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা বা অনৈতিকতা বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার স্বার্থবিধানে বাধা সৃষ্টি করে।
সমষ্টিগতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি গণতন্ত্র ও উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। তবে এর সফলতার জন্য দক্ষ নেতৃত্ব, যথাযথ সম্পদ বিতরণ এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের ভালো সমন্বয় অপরিহার্য।
কেন্দ্র রাজ্য অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর একটি টীকা লেখ।
উত্তর: কেন্দ্র-রাজ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভারতের সংবিধান ও ফেডারেল কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পদ, রাজস্ব সংগ্রহ, বিতরণ এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই সম্পর্কের মাধ্যমে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং জাতীয় ঐক্য সংরক্ষিত হয়।
মূলত কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বেশির ভাগ কর সংগ্রহ করে এবং সেই কর থেকে একটি অংশ রাজ্যগুলিতে বিতরণ করে। এটি রাজ্যগুলোর আর্থিক চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এবং তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকে শক্তিশালী করে। সংবিধানের নির্দিষ্ট তালিকার ভিত্তিতে করের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিভক্ত থাকে; যেমন, কেন্দ্র ইউনিয়ন তালিকার বিষয়গুলিতে কর আরোপ করতে পারে, আর রাজ্যগুলি রাজ্য তালিকার বিষয়ে কর ধার্য করে। তবে পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) এর মাধ্যমে কর সংক্রান্ত কিছু ক্ষমতা সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমন্বিত হয়েছে।
কেন্দ্র থেকে রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন অনুদান ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় যা রাজ্যগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায়। তবে এই আর্থিক সংস্থান বণ্টনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় প্রবণতা দেখা যায়, যার ফলে কখনও কখনও রাজ্যগুলোর আর্থিক স্বায়ত্তশাসনে বাধা সৃষ্টি হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি প্রশাসনিক এবং আইনগত সম্পর্কও কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, যা কেন্দ্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করা হয়েছে একত্রিত দেশের স্বার্থে, তবুও রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনের প্রতি নজর দিতে হয় যাতে ফেডারেল কাঠামো সুষ্ঠুভাবে কাজ করে।
সর্বোপরি, কেন্দ্র-রাজ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক দেশীয় উন্নয়নের ধারাকে দৃঢ় করে এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিত্তি তৈরি করে। তবে, এই সম্পর্কের মধ্যে কোনো ধরনের অযোগ্যতা বা একতরফাভাব রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন ও উন্নয়নের পথে বাধা স্বরূপ হতে পারে, তাই পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতা অপরিহার্য.
পঞ্চম তপশিলের অধীনে রাজ্যপালের ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চম তফসিল (Fifth Schedule) তফসিলি এলাকাগুলোর প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে নির্দেশ দেয়। এই তফসিল এমন রাজ্যগুলোর তফসিলি (Scheduled) এলাকা ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা এবং প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
পঞ্চম তফসিলের অধীনে রাজ্যপালের বিশেষ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ও ক্ষমতা রয়েছে। রাজ্যপালকে এই তফসিলি এলাকায় তফসিলি জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা এবং ঐ এলাকার সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ 244(1) অনুযায়ী এই তফসিলি এলাকাগুলোতে রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ থাকে।
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংক্ষেপে:
রাজ্যপালকে তফসিলি এলাকা ও উপজাতীর কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জমি হস্তান্তর এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে রাজ্যপালের বিধান ও অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
রাজ্যপাল তফসিলি এলাকায় একটি উপজাতি উপদেষ্টা পরিষদ (Tribal Advisory Council) গঠন করেন, যা সরকারের নীতিমালা নির্ধারণে সাহায্য করে।
তফসিলি এলাকার উন্নয়নমূলক এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের আইনসভায় বিশেষ বিধান আনতে অথবা কেন্দ্র সরকারের অনুমোদনে বিধানবলয় বিল বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন।
তফসিলি এলাকায় সুশাসন বজায় রাখতে ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এইভাবে, পঞ্চম তফসিলের অধীনে রাজ্যপাল তফসিলি এলাকা ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসনের জন্য নিয়ন্ত্রক ও পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সরকারের কেন্দ্র ও রাজ্যের অন্যান্য শাখার তুলনায় এ অঞ্চলে রাজ্যপালের ক্ষমতা অনেক বেশি স্বতন্ত্র ও স্পর্শকাতর বলে বিবেচিত হয়।
ষষ্ঠ তপশিলের অধীনে গভর্নরের ভূমিকা সম্পর্কে পর্যালোচনা কর।
উত্তর: ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে গভর্নরের ভূমিকা হল উত্তরাজ্যের তফসিলি উপজাতিদের স্বায়ত্তশাসন ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করা। ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের উপজাতি অঞ্চলগুলিকে স্বায়ত্তশাসিত জেলা ও অঞ্চলে বিভক্ত করেছে, যেখানে গভর্নর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ ধারন করেন।
গভর্নরের প্রধান ভূমিকা ও ক্ষমতাসমূহ:
স্বায়ত্তশাসিত জেলা এবং অঞ্চলের প্রশাসন: গভর্নর এলাকার স্বায়ত্তশাসিত জেলা বা এলাকাগুলিকে বিভাগ করতে পারেন এবং নতুন অঞ্চল গঠন বা বিদ্যমান এলাকার সীমা পরিবর্তনের জন্য নোটিফিকেশন জারি করেন।
স্বতন্ত্র সদস্য নিয়োগ: প্রতি স্বায়ত্তশাসিত জেলা কাউন্সিলে গভর্নর চারজন সদস্য মনোনয়ন দিতে পারেন, যারা গভর্নরের সন্তোষজনক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
নিয়ম ও বিধি অনুমোদন: জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদ দ্বারা প্রণীত নিয়ম ও আইনের জন্য গভর্নরের অনুমোদন আবশ্যক, নতুবা আইন কার্যকর হবে না।
আইনের কার্যকারিতা ও প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান: কাউন্সিলের তৈরি আইন গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া প্রয়োগযোগ্য নয় এবং গভর্নর এই অঞ্চলের প্রশাসন সম্পর্কিত প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও স্বায়ত্তশাসন রক্ষা: গভর্নর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শান্তি, উন্নয়ন ও সরকার পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বা অবৈধ কার্যক্রম বাধা দিতে পারেন।
প্রতিবেদন প্রদান: গভর্নরকে প্রতি বছর রাষ্ট্রপতিকে স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলোর প্রশাসনিক অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে হয়।
আইন প্রয়োগ ও বিচার: গভর্নর নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষ ক্ষমতাও ধারণ করতে পারেন, যেমন মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডের মামলা পরিচালনা।
এই ভূমিকা গভর্নরকে সেদশ্য কাজে নিয়োজিত আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের উপজাতি অঞ্চলের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা ও স্বায়ত্তশাসন রক্ষায় একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তবে গভর্নর সাধারণভাবে সরকারের পরামর্শে কাজ করেন, যদিও ষষ্ঠ তফসিলের কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের ক্ষমতাও রয়েছে।
সংক্ষিপ্তভাবে, ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় গভর্নর স্বায়ত্তশাসিত উপজাতি অঞ্চলগুলোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাপক তত্ত্বাবধান করেন, জেলা ও আঞ্চলিক পরিষদের কার্যক্রম অনুমোদন করেন এবং এসব এলাকায় সংবিধান অনুযায়ী শান্তি ও উন্নয়ন রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
🌸 অবশ্যই সবাইকে শেয়ার করে। 👁️🗨️